হঠাৎ বাস বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

সড়কে গণপরিবহন না থাকায় হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকেই। গাবতলী এলাকা
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মাসুদ মিয়া। গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর শুনে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে গিয়েছিলেন। শুক্রবার ছুটি থাকায় গ্রাম থেকে আর ফেরেননি। আজ শনিবার সকালে বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে দেখেন বাস বন্ধ। অথচ গণপরিবহন বন্ধ থাকবে এমন কোনো পূর্বঘোষণা ছিল না।

মাসুদ মিয়া টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নবীনগরের কালামপুর আসেন। ভাড়া লাগে ১২০ টাকা। এরপর আরও চারবার বিভিন্ন জায়গায় লেগুনা, অটোরিকশা ও রিকশায় আমিনবাজার পর্যন্ত পৌঁছান। তাতে মোট খরচ হয় ১১০ টাকা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি হেঁটে গাবতলী-আমিনবাজার সেতু পার হচ্ছিলেন। তখন কথা হয় প্রথম আলোর প্রতিবেদকের সঙ্গে। ধানমন্ডি ৭ নম্বর তাঁর কর্মস্থল বলে জানান।

মাসুদ মিয়া বলেন, এত কষ্ট করে আসতে হয়েছে, বলে বোঝানো যাবে না। পুলিশ গাড়ি চলতে দিচ্ছে না। গাড়ি বন্ধ থাকবে আগে থেকে ঘোষণাও দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণার কোনো মানে হয় না।

আজ বেলা ১১টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার ভেতরে চলাচলকারী বাস চলছে না। হঠাৎ দু-একটি দূরপাল্লার বাস গাবতলী আসছে। গত তিন দিনের মতো আজও পুলিশের তল্লাশি কার্যক্রম চলমান।

বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। দাপ্তরিক কাজে বা জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজনকে বাস না পেয়ে রিকশা কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

অনেককে গাবতলী-আমিনবাজার সেতু দিয়ে হেঁটে আসতে দেখা গেছে। রিকশাচালকেরা আমিনবাজার অংশ থেকে গাবতলী অংশের সেতু পার করাচ্ছেন ২০ টাকায়। রিকশাচালক মো. বাদল বলেন, ‘আমিনবাজারে আটকে দিচ্ছে, যাত্রী নিয়ে এপারে আসতে দিচ্ছে না। শুধু সেতু পারাপার করাচ্ছি। ২০ টাকা ভাড়া নিচ্ছি।’

হাতে ভারী দুটি বাজারের ব্যাগ নিয়ে সেতু দিয়ে হেঁটে আসছিলেন জহুরা বেগম। ব্যাগের কারণে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল এই নারীর। জহুরা বেগম বলেন, মানিকনগর থেকে আসতে পাঁচবার অটোরিকশা বদলাতে হয়েছে। পাঁচবারে খরচ হয়েছে ১৫০ টাকা। অথচ কামরাঙ্গীরচর যেতে খরচ হতো মোট ৩০ টাকা। গাবতলী আসতেই ১২০ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। কষ্টের কথা তো বাদ।

ব্যাগ, মালপত্র ও ৯ বছরের ছেলে নাফিসকে নিয়ে ১৫০ টাকা খরচ করে রিকশায় গাবতলী-আমিনবাজার সেতু পর্যন্ত আসেন সুমি বেগম। বাইপাইলে চাকরির খোঁজে বোনের বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চাকরি না পেয়ে আগের কাজের এলাকা নারায়ণগঞ্জে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর স্বামী সাত বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

সুমি বেগম বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ থাকবে, তা জানা ছিল না। হেমায়েতপুর পর্যন্ত একটি বাসে আসছিলাম। সেখানে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তাই অটোরিকশায় এসেছি।’