সামাজিক মাধ্যমে ভয়াবহ রূপে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে: মফিদুল হক

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক
ছবি: প্রথম আলো

দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতা ও ঘৃণার মতাদর্শ প্রচার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এসব জায়গায় উদার অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শবহ মতামত ও ব্যক্তিকে আঘাত করা হচ্ছে। পাশাপাশি নারীরা এই আক্রমণের বিশেষ শিকার হচ্ছে।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক মফিদুল হক। এতে ‘সম্প্রীতির সমাজ গঠনে সংস্কৃতির দায়’ শীর্ষক প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন তিনি। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ৪০তম সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

মফিদুল হক বলেন, ‘বিশ্বজনীন সংকটের পটভূমিকায় আমরা দেখছি রক্ষণশীলতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতার উত্থান। আমাদের দেশেও নানা ছিদ্রপথে রক্ষণশীলতা ও সাম্প্রদায়িকতা ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনকে পঙ্গু ও সহিংস করে তুলছে। ঘৃণা, বিদ্বেষ, সংঘাত ও সহিংসতা উসকে দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক। এসবের মোকাবিলা পুরোনো পন্থায় সম্ভব নয়।’

ঘৃণা ছড়ানো মোকাবিলায় জাতিসংঘের সুপারিশগুলো তুলে ধরেন মফিদুল হক। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—সব পক্ষের মধ্যে সংলাপ পরিচালনা। প্রবন্ধে তিনি বলেন, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের অবলম্বন সংগীত, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-লালনের গান, বাঙালির গান। ৪০ বছরের অভিযাত্রায় সংগঠনটি যে বিস্তার পেয়েছে, তা আরও কার্যকর ও সৃষ্টিশীলভাবে ব্যবহারে সচেষ্ট হতে হবে। এ জন্য নিজস্ব গণ্ডি ছাপিয়ে ব্যাপক মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। এখানে সদর্থক বার্তা, সম্প্রীতির বাণী, বিশেষভাবে সংগীতের মাধ্যমে কীভাবে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা যায়, সে জন্য বহুমুখী তৎপরতা দরকার। দ্বিতীয়ত, সমাজে আরও ব্যাপকভাবে বাঙালি জাতিসত্তার গান ছড়িয়ে দিতে হবে।

আলোচনায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাধন ঘোষ বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালে পৌঁছানোর জনমত গঠনে ক্রিয়াশীল ছিল সংস্কৃতি। তখন আজকের মতো এত সংগঠন ছিল না। কিন্তু তারা মাঠে-ঘাটে নাটক, গান দিয়ে মানুষকে সংগঠিত করেছে।

রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে আনিসুজ্জামান নিজে পত্রিকা অফিসে গিয়ে প্রতিবাদলিপি দিয়ে এসেছিলেন। তাহলে এখন কেন হবে না। ফেসবুকে রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতা করে কোনো পোস্ট করলে তেমন প্রতিবাদ দেখা যায় না।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন দরকার। এটি সরকারের হাতে আছে। যারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে ছড়াচ্ছে—সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সংলাপের সুযোগ করে দিলে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী বলেন, ‘আমাদের আত্মপরিচয় সংকট আরও গভীর হয়েছে। আগে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াত। এখন নির্লিপ্ত থাকে, ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্রও নির্লিপ্ত থাকে। এসব থেকে উত্তরণে, সামগ্রিক ধস ঠেকাতে সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।’