কাকরাইলে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, আশপাশে তীব্র যানজটে ভোগান্তি
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারে স্বাভাবিক সময়ই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট তুলনামূলক বেশি থাকে। এর মধ্যে কাকরাইল মোড়ে সড়ক অবরোধ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। এতে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মসজিদের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন। আন্দোলনে কাকরাইল গির্জার সামনের মোড় থেকে কাকরাইল মসজিদ মোড় হয়ে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এর ফলে কোনো যানবাহন কাকরাইল মোড় থেকে সরাসরি হেয়ার রোড দিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হয়ে বাংলামোটরের দিকে কিংবা মৎস্য ভবন মোড় দিয়ে শাহবাগ বা গুলিস্তানের দিকে যাতায়াত করতে পারছে না।
এর ফলে যানবাহনের চাপ বেড়েছে বীর উত্তম শামসুল আলম সড়ক, মগবাজার রোড, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, বীর উত্তম জিয়াউর রহমান সড়ক ও ভিআইপি রোডে। প্রতিটি সড়কে দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে গাড়িগুলোকে।
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানিয়েছেন, কাকরাইলে সড়ক অবরোধের কারণে আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অফিসগামী লোকজনকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। দুপুরের পর থেকে যানজট আরও তীব্র হচ্ছে।
মালিবাগের উদ্দেশে মিরপুর ১১ নম্বর থেকে মেট্রোরেলে করে প্রেসক্লাবের সামনে নামেন আসাদুল ইসলাম। সেখান থেকে তিনি রিকশা নিয়েছিলেন গন্তব্যে যেতে। কিন্তু ভেতরের রাস্তায় রিকশায় তাঁকে আধা ঘণ্টার বেশি সময় যানজটে বসে থাকতে হয়। পরে রিকশা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন তিনি।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কাকরাইল মোড়ে আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রেসক্লাব থেকে রিকশাচালক প্রথমে সেগুনবাগিচা দিয়ে আসছিলেন। যানজট দেখে ভেতরের আরেকটি সড়ক দিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু দূর এগিয়ে আবার যানজট আটকে পড়তে হয়। সেখানে প্রায় ৩০ মিনিট রিকশায় বসে ছিলেন। দেরি হচ্ছে দেখে নেমে হাঁটা শুরু করেছেন। কাকরাইল মোড় থেকে কিছু দূর হেঁটে আবার রিকশা নিতে হবে।
দুপুরে মগবাজার থেকে মতিঝিলের দিকে যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম নামের একজন। তিনি বলেন, ‘মগবাজার থেকে কাকরাইল মোড় পৌঁছাতেই দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। কতক্ষণে মতিঝিল যেতে পারব, জানি না।’
ট্রাফিক পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কাকরাইল মসজিদের সামনের সড়ক অবরোধ করায় আশপাশের সড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি যানজট তৈরি হয়েছে। ওই সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে বিকল্প সড়কে তুলে দেওয়া হচ্ছে। যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা চলছে।
আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তিন দফা দাবি আদায়ে গতকাল বুধবার সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লংমার্চ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাকরাইল মোড়ে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
এরপর বেলা ২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষক–শিক্ষার্থী। সারা রাত সেখানে অবস্থানের পর এখনো তাঁরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।