শেওড়াপাড়ায় বর্জ্যের ভাগাড় নির্মাণে বাসিন্দাদের আপত্তি

সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছেন রাজধানীর পূর্ব শেওড়াপাড়া এলাকার ইয়ুথ টাওয়ার গলির বাসিন্দারা।
ছবি: সংগৃহীত

গৃহস্থালির বর্জ্য রাখার অস্থায়ী ভাগাড় বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছেন রাজধানীর পূর্ব শেওড়াপাড়া এলাকার ইয়ুথ টাওয়ার গলির বাসিন্দারা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র ও স্থানীয় ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে ভাগাড়ের নির্মাণকাজ বন্ধের জন্য লিখিত আবেদনও করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে করা আবেদনে এলাকাবাসীর পক্ষে বলা হয়, নির্মাণাধীন ভাগাড়ের চার মিটারের মধ্যে আবাসিক এলাকা। কাছেই অন্য একটি বেসরকারি বিদ্যালয়। তাই সেখানে ভাগাড় নির্মাণ করা হলে, পচা বর্জ্য থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধে বসবাসের পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। যা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

আবেদনে আরও বলা হয়, গলির রাস্তার প্রশস্ততা কম। কোনোমতে একটি প্রাইভেট কার চলতে পারে। ভাগাড় থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিবহনে ওই রাস্তায় বর্জ্য পরিবহনের ভ্যান ও বড় যানবাহন চললে রাস্তাটি এলাকাবাসী ও জনসাধারণের চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাবে। এ ছাড়া ওই রাস্তায় শিশু ও বয়স্করা সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাহাঁটি ও দৌড়াদৌড়ি করে শরীরচর্চা করেন। ভাগাড়টি চালু হলে সেটি করাও সম্ভব হবে না।

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়রের কাছে করা লিখিত আবেদনে ৩০ জন বাসিন্দা স্বাক্ষর করেছেন। এদের একজন ওই গলির ৮২৬ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা জসীম উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই জায়গায় ভাগাড় নির্মাণ করা হলে এলাকাটি পরিত্যক্ত ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। পরিবেশদূষণের পাশাপাশি গলিপথে বর্জ্য পরিবহনের গাড়ি প্রবেশ করলে, চলাচলের আর কোনো জায়গা থাকবে না।

জসীম উদ্দিন বলেন, বিমানবাহিনীর যে জায়গায় ভাগাড়টি নির্মাণ করা হচ্ছে, এর কিছু দূরেও খালি জায়গা রয়েছে। জায়গাটিও বিমানবাহিনীর। সেখানে ভাগাড় বানালে বাসিন্দাদের কোনো সমস্যা হতো না। ভাগাড় নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিয়েছে কি না, সেটি জানতে এবং নির্মাণকাজ বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি ঢাকা সেনানিবাসেও লিখিত আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির বর্জ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তালতলা বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন পুরোনো এসটিএসটিকে স্থানান্তর করে ইয়ুথ টাওয়ার গলি এলাকায় নেওয়া হচ্ছে। আগের ভাগাড়ের কাছে বিমানবাহিনী একটি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। ময়লার ভাগাড় থাকলে পার্কের নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হবে। তাই পুরোনো ভাগাড় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ময়লার ভাগাড় প্রয়োজন, কিন্তু জায়গাও নেই। সেখানে ময়লার ভাগাড় হলে একটু দুর্গন্ধ হবেই। তবে করপোরেশন থেকে সঠিক সময়ে পরিষ্কার করা হলে দুর্গন্ধ থাকবে না। তিনি বলেন, যেখানে (তালতলা বাসস্ট্যান্ড) পুরোনো ভাগাড় রয়েছে, তার পাশেই করপোরেশনের ১০ ফুটের মতো জায়গা রয়েছে। বিমানবাহিনী ভেতর থেকে আরও ১০ ফুটের মতো জায়গা দিলে সেখানে ভাগাড় নির্মাণ সম্ভব। সেটি আবাসিক এলাকা থেকে দূরে হবে এবং বাসিন্দাদের কোনো সমস্যাও হবে না। ওই জায়গার জন্য বিমানবাহিনীকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারা রাজি হয়নি।

বাসিন্দাদের আবেদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে কাউন্সিলর বলেন, ‘আমি একদিকে সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি, অন্যদিকে জনগণের প্রতিনিধি। মাঝখানে কোনো দিকেই জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছি না। এ ছাড়া ভাগাড় নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়ে গেছে, কাজও শুরু হয়েছে। এখন জায়গা পরিবর্তন করলে আবার নতুন করে সবকিছু করতে হবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরীফ উল ইসলামের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। এ ছাড়া যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।