রাজা-বাদশাকে নিয়ে বিষণ্ন মনে রফিকুল ইসলাম

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর খামারি রফিকুল ইসলাম। শখ করে দুটি গরুর নাম রেখেছিলেন রাজা ও বাদশা
ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

দুটি গরু নিয়ে গাবতলীর হাটে এসেছিলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর খামারি রফিকুল ইসলাম। শখ করে দুটি গরুর নাম রেখেছিলেন রাজা ও বাদশা। ইচ্ছে ছিল নিজের হাতে পালা এ দুটি গরুকে কোরবানির হাটে ভালো দামে বিক্রি করবেন। হাটে আনার পর মালা পরিয়ে রাজা-বাদশাকে সাজিয়েছিলেনও। কিন্তু আজ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যেও একটিও বিক্রি হয়নি। বিষণ্ন মনে রাজা-বাদশাকে শাসনের জন্য সঙ্গে রাখা বাঁশের লাঠিতে মাথা ঠেকিয়ে বসে ছিলেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনটা খুব খারাপ ভাই। মানুষ খালি উল্টাপাল্টা দাম বলে। কত কষ্ট কইরা, কত আশা কইরা এই দুইটারে পালছি, এটার কথা মানুষ ভাবে না।’ তিনি জানান, বিক্রি করতে না পারলে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। পরে কসাইদের কাছে ভালো দাম পেলে বিক্রি করে দেবেন। আর যদি হাটেও কোনো কসাই ভালো দাম বলে, তাহলে বিক্রি করে দিয়ে যাবেন।

কথা বলে জানা গেল, কালো রঙের রাজার ওজন প্রায় ২৩ মণ আর সাদা রঙের বাদশার ওজন ২৫ মণ। রাজা-বাদশার খাবারের পেছনে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা খরচ হয়েছে। রাজাকে ১৬ লাখ টাকায় আর বাদশাকে ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে আশা করেছিলেন। আর এখন রাজার জন্য চাইছেন ৭ লাখ টাকা আর বাদশার জন্য ৮ লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা দাম বলছেন মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা।

শুধু রফিকুল ইসলামের আনা বড় আকারের রাজা ও বাদশাই নয়, এবার গাবতলীর হাটে আনা বেশির ভাগ বড় আকারের গরুই এখনো অবিক্রীত রয়ে গেছে। এসব গরুর মধ্যে রয়েছে ৪০ মণ ওজনের ডন নাম্বার ওয়ান, নেপালি সংকর প্রজাতির ৩০ মণ ওজনের লাল বাহাদুর, সাড়ে ২৭ মণ ওজনের রাজা বাবু এবং ২২ মণ ওজনের কালো মানিকসহ বাহারি নামের আরও অনেক গরু।

এসব গরু হাটের যে অংশে রাখা হয়েছে, সেখানে ক্রেতাদের সমাগমও খুব বেশি একটা নেই। হাটে যাওয়া উৎসুক মানুষ সেলফি তুলতে এবং গরুর দাম শুনতেই গরুগুলোর আশপাশে ভিড় করছেন।

মূলটি বিক্রি না হওয়ায় ‘ফ্রি’টি বিক্রি

বিক্রি না হলে সাড়ে চার বছর বয়সের ডন নাম্বার ওয়ানকে আরেক বছর পালার চেষ্টা করবেন বলেও জানালেন খামারি
ছবি: প্রথম আলো

৪০ মণ ওজনের ফরিদপুরের ডন নাম্বার ওয়ানকে এই হাটে বিক্রির জন্য এনেছিলেন খামারি রুবায়েত হোসেন। দাম চেয়েছিলেন ২৫ লাখ টাকা। হাটে আনার পর সাড়ে ১৮ লাখ টাকা দামও উঠেছিল। তখন বিক্রি করেননি।

মন খারাপ করে রুবায়েত হোসেন জানালেন, হাটে বড় গরুর ক্রেতা একেবারেই নেই। বিক্রি করার মতো দাম কেউ বলছে না। বিক্রি না হলে সাড়ে চার বছর বয়সের ডন নাম্বার ওয়ানকে তিনি আরেক বছর পালার চেষ্টা করবেন বলেও জানালেন।

এদিকে ডন নাম্বার ওয়ানের সঙ্গে ছোট আকারের একটি গরু ফ্রি দেবেন বলেও সঙ্গে এনেছিলেন। বড় গরুটি বিক্রি করতে না পেরে শেষে ফ্রি দিতে নিয়ে আসা ছোট গরুটিই তিনি ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন।

ফিরিয়ে নিয়ে গেলে আবার পালতে হবে

নেপালি সংকর প্রজাতির ৩০ মণ ওজনের লাল বাহাদুরকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে এনেছিলেন খামারি আরিফুল ইসলাম। প্রথমে এই গরুর জন্য তিনি দাম চেয়েছিলেন ২২ লাখ টাকা। এখন ১০-১২ লাখ হলেও বিক্রি করে দেবেন বলে জানালেন। কিন্তু ক্রেতারা লাল বাহাদুরের জন্য সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন।
আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গরুটিকে নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে আবার পালতে হবে। আর মাংস বিক্রির কসাইদের কাছে খুব বেশি দাম পাওয়া যাবে না।’ তাই যদি মোটামুটি দাম পান, তাহলেও বিক্রি করে দেওয়ার ইচ্ছা আছে।

এত কমে বেচলে তো মরা ছাড়া গতি নাই

ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে আনা হয় কালোমানিককে
ছবি: প্রথম আলো

গরু বিক্রি করতে না পারায় মন খারাপ লাগা নিয়ে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে এই হাটে গরু নিয়ে আসা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। তিনি ২২ মণ ওজনের কালো মানিক নামের গরুটিকে নিয়ে এসেছিলেন।

কথা না বাড়িয়ে শুধু এইটুকু বললেন, ‘গরুটাকে আমি সাড়ে তিন বছর পালছি। দিনে ওর পেছনে ৫০০ টাকার ওপরে খাবার খরচ লাগছে। এই গরুটার জন্য দাম বলে মাত্র ৫ লাখ টাকা। এত কমে গরু বেচলে তো মরা ছাড়া কোনো গতি নাই।’ সবশেষ ৭ লাখ টাকা হলেও তিনি গরুটি বিক্রি করবেন বলে জানান।

বড় গরুর চাহিদা অনেক কমেছে

গাবতলীর হাটে প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খামারিরা বড় আকারের গরু নিয়ে আসেন। বিশাল আকারের এসব গরুর বিভিন্ন ধরনের বাহারি নামও দেওয়া হয়ে থাকে। হাটে গরু নিয়ে আসা পাইকারেরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই কোরবানিতে বড় গরুর চাহিদা অনেক কমে গেছে। এখন হাটগুলোতে খুব বেশি একটা বড় গরু বিক্রি হয় না। তাই নিজের ঘরে কোনো গরুকে পালন করে বড় করাও এখন অনেক ঝুঁকির।

এদিকে হাটে বড় গরু খুব বেশি একটা বিক্রি না হলেও গত কয়েক দিনের মতো ঈদের এক দিন আগে আজ দিনভর ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি থাকায় বিকেলের দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা হাটে পশু কিনতে ভিড় করতে থাকেন। আজকে গরুর দামও তুলনামূলকভাবে কমেছে বলে জানান হাটে গরু কিনতে যাওয়া ক্রেতারা।