চার কারণে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে দেরি

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকা
ফাইল ছবি

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ ২০১০ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা এখনো শেষ হয়নি। প্রকল্পের এই দীর্ঘসূত্রতার পেছনে চারটি কারণ উল্লেখ করেছে রাজউক। ৯ মে প্রকল্পসংক্রান্ত রাজউকের সবশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই আবাসিক প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। কাজ শুরুর পর প্রকল্পের মেয়াদ এখন পর্যন্ত সাতবার বাড়ানো হয়েছে। সবশেষ প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই সময়সীমার মধ্যেও প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে খোদ রাজউকের কর্মকর্তারাই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

কাজ শেষ করতে না পারার প্রথম কারণ হিসেবে করোনা মহামারিকে দায়ী করা হয়েছে অগ্রগতি প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সে সময় লোকবলের অভাবসহ কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকার অধিবাসী বা ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ শুরুতে ‘ভুল বুঝেছেন’। এতে তাঁরা রাজউকের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা করেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটান। ফলে প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজে বিলম্ব হয়েছে।

রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট আয়তন ৬ হাজার ২২৭ দশমিক ৩৬ একর। ঢাকার খিলক্ষেত, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জমি নিয়ে প্রকল্পটি গড়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণির (আবাসিক, বাণিজ্যিক, প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক, অন্যান্য) ও আয়তনের মোট ২৯ হাজার ৭৭৬টি প্লট আছে। প্রকল্পে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নগর সেবাকেন্দ্রিক প্লট আছে দুই হাজারের বেশি। এর মধ্যে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক প্লট প্রকল্পের মূল মহাপরিকল্পনা বা নকশা সংশোধন করে তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে।

রাজউকের অগ্রগতি প্রতিবেদনে প্রকল্পের কাজে দেরি হওয়ার পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দ নিয়ে আদালতে মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকায় প্লট বরাদ্দ কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে।

প্রকল্পের কাজে বিলম্বের চতুর্থ কারণ হিসেবে পূর্বাচল এলাকায় আগে থেকে থাকা ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থানান্তরে বাধাবিঘ্নের কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরে স্থানীয় লোকজন বাধা দিয়েছেন। তাঁদের রাজি করিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করতে হয়েছে বলে প্রকল্পের কাজে দেরি হয়েছে।

আরও পড়ুন

রাজউক সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প এলাকায় ৩৬৫ কিলোমিটার সড়ক, ৫২টি সেতু, ৪৩ কিলোমিটার লেক তৈরি, শীতলক্ষ্যা নদী ও বালু নদের তীর সংরক্ষণ, পুরো এলাকায় পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ নানা কাজ করতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। ইতিমধ্যে ৩১৫ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকি অংশের নির্মাণকাজ চলমান। ৪২টি সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১০টি সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বাচলের প্রায় পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি সরবরাহের কাজ চলমান। এলাকায় বেশ কিছু নতুন বাড়িও দেখা গেছে।

জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জ্বল মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে পুরো এলাকা পানি সরবরাহব্যবস্থার আওতায় আসবে। এখন যে কেউ চাইলেই পূর্বাচলে বাড়ি বানাতে পারবেন। সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়া প্রকল্পের মূল কাজ ২০২৪ সালের মধ্যেই শেষ হবে। প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না।

আরও পড়ুন