আমরা ধর্মান্ধ নই বলেই সিরিয়া–ইরাকের মতো হয়নি বাংলাদেশ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
ফাইল ছবি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘এ দেশে উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। আমরা ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নই। এ কারণেই সিরিয়া–ইরাকের মতো হয়নি বাংলাদেশ।’

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, দেশকে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। সেটি প্রতিহত করা হয়েছে। মানুষ হত্যার প্রশ্নই আসে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা দেখলাম অগ্নিসন্ত্রাস, গাড়িতে–বাসাবাড়িতে আগুন।  যখনই আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করলাম,  তখনই শুরু হলো নতুন অধ্যায়—জঙ্গিবাদের। আমরা দেখলাম ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাবেলাকে হত্যা করা হলো। রংপুরে জাপানি নাগরিককে হত্যা, পঞ্চগড়ে ইসকন মন্দিরের পুরোহিত, বান্দরবানের বৌদ্ধমন্দিরে পুরোহিতকে হত্যা করা হলো। শিয়া মসজিদে হামলা হলো। মসজিদে বোমা ফাটানোর চক্রান্ত হলো।’

এসব ঘটনার পেছনে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা ছিল বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আইএস নাম দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করার চেষ্টা হলো। শোলাকিয়ায় ঈদগাহে হামলা হলো। ক্রমাগতভাবে হামলা হতে থাকল। এর মধ্যেই হোলি আর্টিজানের হামলা হলো। সারা পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে আমেরিকা বলেছিল, বাংলাদেশ শেষ হয়েছে গেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তাদের সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামকে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে সেটি বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি। যেখানে সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি মুসলমান দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নেই। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ জনগণ, আলেম-ওলামা, মসজিদের ইমাম, শিক্ষকদের সহযোগিতা সমর্থনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে এটিইউ–প্রধান কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

একটি ঘটনার উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এক ইসরায়েলি মহিলা সাইট ইন্টেলিজেন্সে লিখতেন, ছবি প্রকাশ ও সংবাদ প্রকাশ করতেন। ওনারা (বিদেশিরা) ছুটে আসতেন, আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেন, আইএস নাই এই যে দেখেন।’ মন্ত্রী বলেন, ‘এসব হোমগ্রোন এসবের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনালি কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের পুলিশ বাহিনী সেদিন জীবন বাজি রেখে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেক পুলিশ সদস্য শাহাদতবরণ করেছেন। এখন পার্শ্ববর্তী দেশের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীরাও আমাদের প্রশংসা করেন।’

কোনো সময়ই ইসলাম জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জিহাদের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে, তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, ইসলামকে বর্তমানে একটি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে পরিচিত করতে ইসরায়েলসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী চক্রান্ত করছে। সেখানে মুসলমানদেরই কাজে লাগানো হচ্ছে। এসব চক্রান্ত প্রতিরোধে আলেম-ওলামাদের ধর্মের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণকে জানাতে হবে।

অনুষ্ঠানে ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ধর্মের সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলী সভাপতি শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের প্রধান ইমাম শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, বইটি ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে।