মার্কেটিং ডের আয়োজনে ‘টেকসই মার্কেটিং’ নিয়ে আলোচনা

মার্কেটার্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ (এমআইবি) আয়োজিত ‘ষষ্ঠ বাংলাদেশ মার্কেটিং ডে’ অনুষ্ঠানের অতিথিরা। ১৩ অক্টোবর
ছবি: দীপু মালাকার

আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে ‘ষষ্ঠ বাংলাদেশ মার্কেটিং ডে’ উদ্‌যাপন করছে মার্কেটার্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ (এমআইবি)। ‘টেকসই মার্কেটিং’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চলছে আলোচনা। এই আয়োজনে দেশের শীর্ষস্থানীয় মার্কেটিং বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পরিবেশ, মানবাধিকার, বাস্তুসংস্থান এবং মার্কেটিংয়ের নৈতিক দিকগুলো সম্মিলিতভাবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করলেই মার্কেটিং টেকসই হবে।

আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ মার্কেটিং ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভাপতিত্ব করেন এমআইবির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীজানুর রহমান। মার্কেটিংয়ের মার্কেটিংয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীরা এতে অংশ নেন।

সকালে মার্কেটিং ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘উন্নত হওয়া মানে সময়োপযোগী হওয়া। এ ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে আমরা সামনের দিকে ধাবমান। আমরা প্রচুর সময় খুইয়েছি। দ্বিতীয় মিলেনিয়ামে আমাদের উল্লেখযোগ্য অবস্থান নেই৷ সেখান থেকে বেরিয়ে এখন আমরা তৃতীয় মিলেনিয়ামে প্রবেশ করেছি৷ আমাদের সুযোগ এসেছে নিজের কাজ নিজে করার৷ আমার বিশ্বাস, গত দুই দশক ধরে আমরা একটা তীরে পৌঁছেছি৷ এখন আমাদের সামনে যাত্রা।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, ‘মার্কেটিংয়ের যেসব লোক অনেক বছর আগে পড়াশোনা করে গেছেন, তাঁরা প্রযুক্তির সঙ্গে কীভাবে খাপ খাওয়াবেন, সেটা একটা চ্যালেঞ্জ৷ নতুন প্রজন্মকেও প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে৷ প্রযুক্তি যতই আসুক, মার্কেটিংয়ের তিনটি কাজ মানুষকেই করতে হবে৷ চাহিদা ব্যবস্থাপনা, ডিফারেন্স ম্যানেজমেন্ট (আলাদা করা), সম্পর্ক রক্ষা বা টিকিয়ে রাখা৷ সাধারণ মার্কেটিংয়ের ধারণা হচ্ছে, আমরা শুধু কোম্পানির জন্য লাভ করব৷ কিন্তু এখন আমাদের এর বাইরে গিয়েও আমাদের সিদ্ধান্তের প্রভাবটা সমাজে কীভাবে পড়ছে, সেটা ভাবতে হচ্ছে৷’

‘টেকসই মার্কেটিং’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মার্কেটিং ডের আলোচনা সভায় আসা অতিথিদের একাংশ। ১৩ অক্টোবর
ছবি: দীপু মালাকার

পরিবেশ, মানবাধিকার, বাস্তুসংস্থান এবং মার্কেটিংয়ের নৈতিক দিকগুলো সম্মিলিতভাবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করলেই মার্কেটিং টেকসই হবে বলে মন্তব্য করেন মার্কেটিংয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক মীজানুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘আমরা ভোক্তাদের কথা কম চিন্তা করি৷ যাঁদের টাকাপয়সা নেই, খুবই কম টাকায় চলেন, তাঁদের কী ব্র্যান্ড—তাঁদের পানি, লবণ ইত্যাদির ব্র্যান্ড কী? মার্কেটিংয়ের বইগুলোতে যাঁদের টাকা নেই, তাঁদের নিয়ে কোনো আলোচনা নেই৷ এখন আমাদের এ জিনিসটা নিয়ে ভাবতে হবে৷ গরিব মানুষ বা কম আয়ের মানুষের জন্য আরও সাশ্রয়ী দামে পানি, লবণ ও অন্যান্য পণ্যের ব্যাপারে ভাবতে হবে৷ সবাই যেন পণ্যের ভাগটা পান৷’

এশিয়ান মার্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ বিন তাজ বলেন, বিক্রির ক্ষেত্রে ‘ট্যালেন্ট পাইপলাইন’ সুসংহত করতে না পারলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার৷ এ ক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷ বিক্রির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দরকার৷ এটি একটি সায়েন্টিফিক ডিসিপ্লিন৷ টেকসই মার্কেটিংয়ের জন্য টেকসই ক্যারিয়ার পরিকল্পনাও লাগবে৷

আশরাফ বিন তাজ বলেন, ‘মার্কেটিং পেশাজীবীরা ৪০-৪৫ বছর বয়সে একটি চরম সংকটে পড়েন চাকরি পরিবর্তন করতে গেলে৷ পৃথিবী অতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে৷ আমরা আমাদের ডিজিটাল, বিশ্লেষণমূলক দক্ষতা উন্নত করতে না পারলে টিকতে পারব না। আমাদের পাঠ্যসূচিতে সেই বিষয়গুলো থাকতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে করপোরেটদেরও ভূমিকা থাকতে হবে, আবার ব্যক্তিকেও মেধা, শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে৷ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে৷’

এমআইবিকে তরুণ প্রতিভাবানদের উন্নত করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান আকিজ বশীর গ্রুপের পরিচালক (অপারেশন) খোরশেদ আলম৷

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এমআইবির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম৷ উদ্বোধনী আলোচনার পরিকল্পনামন্ত্রীর উপস্থিতিতেই ষষ্ঠ মার্কেটিং ডের স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়৷ এরপর মার্কেটিং উপলক্ষে বড় আকারের একটি কেক কাটা হয় টিএসসি মিলনায়তনেই৷ উদ্বোধনী পর্ব শেষে শুরু হয় প্যানেল আলোচনা৷ দিনব্যাপী মার্কেটিংবিষয়ক চারটি প্যানেল আলোচনা, একটি কি-নোট পর্ব, শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে এই আয়োজনে।