প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ ৫ দফা
ঝাঁজালো স্লোগান, জ্বালাময়ী বক্তব্য, গণসংগীতের উদ্দীপ্ত সুর আর প্রতিবাদী নাটকের সংলাপে শরতের শেষ বেলা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিল রাজধানীর শাহবাগ চত্বর।
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল, অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, বাধাহীন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিশ্চিত করা, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করার পাঁচ দফা দাবিতে অনুষ্ঠিত হলো এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ।
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ শনিবার বিকেল চারটায় এই সমাবেশ আয়োজন করেছিল ৩০টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট। এতে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি নিখিল দাস।
আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে স্লোগান, গণসংগীত, আবৃত্তি ও পথনাটকের পরিবেশনা মিলিয়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যারাত অবধি এগিয়েছে সামাজিক–সাংস্কৃতিক কর্মীদের এই প্রতিবাদী সমাবেশ।
সমাবেশের শুরুতেই উদীচীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন দুটি গণসংগীত ‘মুক্ত মানুষের স্বাধীনতা অধিকার’ ও ‘দেখ চারিদিকে শুধু খাই খাই’।
আলোচনার সূচনা করে সমাবেশের সভাপতি নিখিল দাস বলেন, দেশে একটি সংকটময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটিই নাম পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করে মানুষের বাক্স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। বাজার এখন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। দ্রব্যমূল্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা নেই। উন্নয়নের নামে যেসব বড় প্রকল্প হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের বিশেষ উপকার হচ্ছে না। অথচ তাঁদের ওপর করের চাপ বাড়ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিদেশি ঋণ বাড়ছে, কমে গেছে রিজার্ভ। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না, বলতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, এমন সময় একটি নতুন সাংস্কৃতিক জাগরণ প্রয়োজন। কিন্তু একসময়ের মহিরুহসম সাংস্কৃতিক নেতারা আর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছেন না। কিন্তু অনেক নতুন তরুণেরা এগিয়ে এসেছে সাহসী ভূমিকা নিয়ে। প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক–সামাজিক কর্মীরা জাতির সংকটকালে একত্রিত হয়েছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু নানা অধ্যাদেশ ও আইন করে ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের সেই অধিকার হরণ করেছে। তিনি বলেন, সরকার তার নিজের পক্ষে যখন কোনো আইন করে, তখন সেটি ব্যাপক জনসাধারণের কোনো উপকারে আসে না। দুঃখের বিষয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে অনেক বড় বড় সাংবাদিক নেতাকেও সরকারের পক্ষ নিতে দেখা যায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহা মির্জা বলেন, দেশ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। গত ৫০ বছরের মধ্যে দেশে এখন ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। সরকারের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বিপুল অর্থের মালিক হচ্ছে। বিদেশে বিপুল টাকা পাচার করছে। অথচ শ্রমজীবী মানুষ ক্রমেই দরিদ্র হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য তাঁরা খেতে পারছেন না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, লেখক মফিজুর রহমান, প্রগতি সংঘের সহসভাপতি শামসুজ্জামান হীরা, ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, সংহতি সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি ইফতেখার আহমেদ, গণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নেতা আবুল হোসেন। বক্তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন।
আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে থিয়েটার-৫২ পরিবেশন করে মিজানুর রহমান রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘একটি সাহসী ফুল দেখা যায়’। সংগীত পরিবেশন করেন বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও সংহতি সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীরা। আবৃত্তি করেছেন স্বদেশ চিন্তা সংঘের হাসান ফখরি। স্বরচিত কবিতা পড়েন শামসুজ্জামান। শেষে বাউলগান পরিবেশন করেন অনিমেষ বাউল। সঞ্চালনা করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।