উল্কার মতো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে মানুষ: অধ্যাপক দীপেশ

রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে রোববার স্মৃতি বক্তৃতা দেন অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী
ছবি: প্রথম আলো

মানুষ এখন যে কালপর্বে বাস করছে, তা শুধু গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নের যুগই নয়, একই সঙ্গে প্লানেটারি যুগও। উল্কাপাতে যেমন ডাইনোসর মারা গেছে। সংখ্যায়, জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর উন্নয়নে, প্রযুক্তিতে ও সক্ষমতায় মানুষ এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে সে–ও হয়ে উঠেছে উল্কার মতো এক শক্তি। প্রকৃতিকে যা এক বিপজ্জনক জায়গায় এনে ফেলেছে।

রোববার রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের লরেন্স এ কিম্পটন ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী। তিনি অনুষ্ঠানে ‘দ্য প্লানেটরি এজ ইন হিউম্যান হিস্টি’ শিরোনামে নেহরীন খান স্মারক বক্তৃতা দেন।

দীপেশ চক্রবর্তী বলেন, মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যে অক্সিজেনের প্রয়োজন, তা সরবরাহ করে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, গাছপালা, হাইড্রোপ্ল্যাংকটন নামের একধরনের সমুদ্র–শেওলা। হাইড্রোপ্ল্যাংকটন একাই ৬০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করে। সমুদ্রের তাপ ৬ ডিগ্রি বেড়ে গেলেই এরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কোটি কোটি বছর ধরে এরা অক্সিজেনের সঞ্চয় গড়ে তুলেছে। এরা একধরনের প্রাকৃতিক ইতিহাস লেখছে। মানুষের ইতিহাসও এখন তার অংশ।

এ বক্তৃতার পটভূমি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দীপেশ চক্রবর্তী বলেন, মানুষের ইতিহাসের সঙ্গে প্রকৃতির ইতিহাসের তফাৎ আছে। প্রকৃতি চলে তার নিজস্ব নিয়মের অধীনে। কিন্তু মানুষের ইতিহাসে শুধু নিয়ম নয়, স্বাধীনতাও আছে। মানুষের ভুল করার ও পছন্দ করার স্বাধীনতা আছে। মানুষ অভাব ও ভয়ের হাত থেকে মুক্তি চায়।

নিম্নবর্গের ইতিহাস প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দীপেশ চক্রবর্তী বলেন, কৃষক বিদ্রোহের দিকে তাকালে দেখা যায়, কৃষকেরা দৈনন্দিন অবমাননার বিরুদ্ধে প্রথমে বিদ্রোহ করে। সবাই স্বাধীনতার কথা বলে—নারী, দলিত বা কৃষক সবাই।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির মুখ্য উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দীপেশ চক্রবর্তী পৃথিবী ও গ্রহের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। গ্রহের সঙ্গে মানুষ প্রথমে তার সম্পর্ক বুঝতে না পারলেও প্রকৃতপক্ষে এখন তা একাকার হয়ে গেছে। তাঁর পর্যবেক্ষণ অন্তর্দৃষ্টিমূলক।

অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা প্রয়াত আকবর আলি খানের অকালপ্রয়াত কন্যা নেহরীন খানের স্মরণে পঞ্চমবারের মতো এ বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এম এম শহিদুল হাসান বলেন, আকবর আলি খান তাঁর কন্যাবিয়োগের কষ্ট প্রশমনের উদ্দেশ্যেই বার্ষিক এই স্মৃতি বক্তৃতা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছিলেন।

নেহরীন খান স্মারক বক্তৃতার বক্তা নির্বাচনী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ফকরুল আলম তুলে ধরেন দীপেশ চক্রবর্তীর পরিচয়। সবাইকে ধ্যনবাদ জানান ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক এলাহী চৌধুরী।