মন্দিরে মন্দিরে বিসর্জনের বিষাদ আর সিঁদুর খেলার আনন্দ

বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলার আনন্দ। আজ রাজধানীর খামারবাড়ি পূজামণ্ডপে
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

দেবী দুর্গা বিদায় নিচ্ছেন। দুর্গাপূজার মণ্ডপগুলোতে একদিকে বিসর্জনের বিষাদ, অন্যদিকে সিঁদুর খেলার আনন্দ। ফলে আনন্দ-বিষাদে ভরে আছে ভক্তদের অন্তর।

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে আজ মঙ্গলবার সাকালে গিয়ে দেখা গেল, লাল-সাদা শাড়ি পড়ে শত শত গৃহিণী বরণডালা ও সিঁদুরের কৌটা নিয়ে হাজির। তাঁরা দেবীর চরণ স্পর্শ করে সঙ্গী বা উপস্থিত অন্য ভক্তদের কপালে-কপোলে সিঁদুর মাখিয়ে দিচ্ছেন।

শান্তিনগরের বাসা থেকে বরণডালা নিয়ে অন্যতম প্রাচীন এই মন্দিরে এসেছিলেন শান্তা ঘোষ। তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ প্রকৌশলী, কাজ করেন মেট্রোরেলে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল শহরের কাঠপট্টিতে। পূজা উদ্‌যাপনে সাধারণত বরিশালেই যান তাঁরা। মৃত্যুঞ্জয়ের কাজের চাপ বেশি, তাই এবার বাড়ি যাওয়া হয়নি।

সংসারের কল্যাণ কামনায় বরণডালা সাজিয়ে এনেছিলেন শান্তা। তিনি জানালেন, বিসর্জনের পর এই সিঁদুরখেলা মূলত বিবাহিত নারীদের একটি মাঙ্গলিক আচার। স্বামী-সংসারের মঙ্গল কামনা করে সবাই বরণডালা সাজিয়ে বা সিঁদুরের কৌটা সঙ্গে নিয়ে আসেন। এই সিঁদুর দেবীর চরণ স্পর্শ করিয়ে কৌটায় করে সংরক্ষণ করেন। এই সিঁদুরই তাঁরা সারা বছর ব্যবহার করেন।

যাঁরা বরণডালা সাজিয়ে আনেন, তাতে থাকে—ধান, দূর্বা, বেলপাতা, কাঁচা হলুদ, কড়ি, যেকোনো রকম অন্তত একটি ফুল, নাড়ু আর মিষ্টি। আর সিঁদুরের কৌটা তো থাকেই। এই বরণডালা নিয়েই দেবী প্রণাম করে ঘরে ফেরেন তাঁরা।

কাকরাইল থেকে লীলাময়ী এসেছিলেন বোন লক্ষ্মী প্রিয়া আর বৌদি মণিকা রানীকে সঙ্গে নিয়ে।

সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে দেবীর চরণে বরণডালা থেকে অঞ্জলি দিয়ে তাঁরা পরস্পরের মুখে–কপালে সিঁদুর মাখিয়ে দিয়ে সেলফি তুলছিলেন প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে। লীলা জানালেন, তাঁদের বাড়ি ঢাকাতেই। প্রতিবছর বিভিন্ন মন্দিরে ঘুরে ঘুরে সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। গতবার বিজয়ায় রমনা কালীমন্দিরে গিয়ে ছিলেন, এবার এসেছেন সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে।

মন্দিরের পূজারি শেখর লাল গোস্বামী ও সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির পূজা পরিষদে সহসভাপতি অঞ্জন নন্দীর সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা জানালেন, আজ বিজয়া দশমীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হচ্ছে। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে সকালে দশমী বিহিত পূজা ও এরপর দর্পণ বিসর্জনের ভেতর দিয়ে। দশমী পূজার লগ্ন ছিল সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৫৭ মিনিট পর্যন্ত। এর মধ্যেই বিভিন্ন মন্দিরে দশমীর পূজা সম্পন্ন হয়েছে।

দর্পণ বিসর্জনের ভেতর দিয়েই মূলত দেবী দুর্গার বিসর্জন সম্পন্ন হয়। এরপর বিবাহিত নারীরা সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। ঢাকায় সাধারণত স্থায়ী মন্দিরগুলোতেই সিঁদুর খোলার আয়োজন হয়ে থাকে। বেলা দুইটায় প্রতিমা সিদ্ধেশ্বরী মন্দির থেকে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। অন্য সব মন্দির থেকেও প্রতিমা ঢাকেশ্বরীতে আনা হবে। এপর সেখান থেকে সব প্রতিমা নিয়ে পুরান ঢাকার দিকে বিসর্জনের প্রধান শোভাযাত্রা শুরু হবে। সময় দেওয়া হয়েছে বিকেল চারটা। তবে কিছু এদিক-ওদিক হতে পারে। বিসর্জন হবে বুড়িগঙ্গায় ‘বিনয় ঘাটে’। এটি সোওয়ারী ঘাটের পাশেই। সাধারণত এই ঘাটেই হয়ে থাকে দেবীর ভাসান।

পূজারি শেখর গোস্বামী জানালেন, এবার দেবী এসেছে ঘোটকে, যাচ্ছেনও ঘোটকে। এর তাৎপর্য হলো বিশ্বে উত্তেজনা বাড়বে। তবে দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়ে তাঁরা শান্তি আর কল্যাণই কামনা করেছেন।

আরও পড়ুন