কবিতা ঐক্য গড়ে তোলে, শান্তির কথা বলে

জাতীয় কবিতা পরিষদের উদ্যোগে ৩৫তম জাতীয় কবিতা উৎসবের শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার আলোচনায় অংশ নেন দেশি-বিদেশি কবি-লেখকেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

কবিতায় আন্দোলন হয়, কবিতা মানুষের ঐক্য গড়ে তোলে। কবিতা দিয়ে শান্তি অর্জনের জন্য প্রতিবাদ ও সংগ্রাম করে কবিরা। সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য কবিদের বিবেকের বার্তাবাহক হিসেবে দাঁড়াতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে দুই দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসবে এসব কথা বলেন কবি–সাহিত্যিকেরা। জাতীয় কবিতা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ৩৫তম এ কবিতা উৎসবের শেষ দিন ছিল আজ।

শেষ দিনের উৎসবের প্রথম পর্বে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘যতগুলো আন্দোলন এসেছে, সব আন্দোলনই কবিতা। কবিতার আন্দোলনের বড় মাইলফলকের নাম জাতীয় কবিতা উৎসব। বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা, ভাষার স্বাধীনতা আমার কবিতা, উক্তির স্বাধীনতা আমার কবিতা, বোধের স্বাধীনতা আমার কবিতা।’

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এবং তার পরবর্তী সময়ে যেসব কবিতা ও রচনা সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ে গবেষণা ও সংকলনের চেষ্টা করা হবে বলে জানান একাডেমির মহাপরিচালক।

‘এবারের স্লোগান বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা’ শীর্ষক প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন কবি-লেখক-সাহিত্যিকেরা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

কবিতা শুধু প্রেমেরই নয়; কবিতা বৃক্ষ, স্বদেশপ্রেম নিয়েও হয় উল্লেখ করে নাট্যব্যক্তিত্ব ও নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, এমনকি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেম নিয়েও কবিতাও হয়। কবিতার হাত ধরেই প্রত্যাখ্যান হয়, গ্রহণ হয়। এগুলো সবই সংস্কৃতির অংশ।

প্রথম পর্বের সেমিনারে ‘বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা’ শীর্ষক প্রবন্ধ তুলে ধরেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক। তিনি বলেন, এবারের স্লোগান ইঙ্গিতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি বাক্য। এই স্বাধীনতা সব অর্থে স্বাধীনতা।

আনিসুল হক বলেন, বাংলা কবিতা চিরকালই বাংলার স্বাধীনতাকে ধারণ করে এসেছে। বাংলার স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাও কবিতার শরীরে বর্ণগন্ধ হয়ে মিলেমিশে থেকেছে। বাংলার শ্রেষ্ঠ লেখক–কবিরা বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলন জনক এবং জাতক। তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই বাংলায় অনেক কবিতা রচিত হয়েছে।

জাতীয় কবিতা উৎসবে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সকালে সেমিনারে আরও অংশ নেন অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান, ছড়াকার আমীরুল ইসলাম, শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন।

দ্বিতীয় পর্বের সেমিনার ছিল ‘কবিতা এবং শান্তি’ নিয়ে। এর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। এ পর্বে অংশ নিয়ে বিশিষ্ট নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, শান্তিময় বিশ্বের কথা ভাবতে হলে অন্যদের শান্তি ও সংস্কৃতির কথা ভাবতে হবে। তাহলেই শান্তি অর্জিত হবে। কবিরা তাদের কবিতার মাধ্যমে শান্তি অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেন, প্রতিবাদ করেন।

জাতীয় কবিতা উৎসবের শেষ দিনের একটি সেমিনারে অংশ নেন বিশিষ্ট নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সভাপতির বক্তব্যে কবি কামাল চৌধুরী বলেন, শান্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। কবিরা আশার কথা বলেন, শান্তির কথা বলেন। কবিতা রাজনীতিতেও ভূমিকা রাখে। কবিকে শান্তির কথা বলতে হলে তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়, প্রতিবাদও করতে হয়। কারণ, কবি এই বৃহত্তর সমাজেরই অংশ।

জাতীয় কবিতা উৎসবে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

এ পর্বে আরও বক্তৃতা করেন ভারতের কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, অরুণ কমলসহ অস্ট্রিয়া ও ইরানের কবিরা।