অগ্নিদুর্ঘটনায় শুধু দায় চাপানোর চেষ্টা

বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো বুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর স্মরণে মানববন্ধনে দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা অগ্নিদুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি দাবি করেন। গতকাল ক্যাম্পাসেছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

রাজধানীতে বড় কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেই দেখা যায়, কোনো না কোনো সরকারি সংস্থার গাফিলতি ও তদারকির অভাব ছিল। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীর আগুন থেকে শুরু করে সর্বশেষ বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড—চিত্রটি একই।কিন্তু কোনো ঘটনায় সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

বেইলি রোডের আটতলা ভবন গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সামনে এসেছে একই গাফিলতির চিত্র। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলা করেছে তার এজাহারে বলা হয়েছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দোকান পরিদর্শকদের ‘ম্যানেজ’ করে ভবনে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করা হচ্ছিল।

আরও পড়ুন

পুলিশের মামলাটিতে নাম উল্লেখ করে ভবনের মালিক প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁর মালিক ও ভবনের তত্ত্বাবধায়ককে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি কোনো সংস্থা বা সংস্থার কোনো কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিদর্শনে ভবনে অগ্নিঝুঁকির চিত্র নিয়মিতই বেরিয়ে আসে। যেমন ২০২৩ সালে তারা সারা দেশে ৫ হাজার ৩৭৪টি ভবন পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ২ হাজার ১১৮টি ভবনে ঝুঁকি খুঁজে পায়। ৪২৪টি ভবনকে তারা অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ঢাকায় বিগত পাঁচ বছরে হওয়া অন্তত ৯টি বড় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা নিজেদের দায় অন্য সংস্থার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার তদন্তে সরকারি সংস্থার গাফিলতির চিত্র উঠে আসে। কিন্তু তাদের ‘দায়মুক্তি’ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

এবার এভাবে দায়মুক্তি দেওয়ার সমালোচনা করলেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য এবং সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনা তদন্ত করে ৬২ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।

আরও পড়ুন

বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। তিনি গতকাল সংসদে আরও বলেন, ‘আমরা সে সময় ১ হাজার ৩০০ ভবনকে চিহ্নিত করেছিলাম, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে, যে ভবনের প্ল্যান (নকশা) ঠিক নেই, যে ভবনের অধিকাংশ ফ্লোর (তলা) অননুমোদিতভাবে করা হয়েছে, সে ভবনগুলো কিন্তু ভাঙা সম্ভব হয়নি। এটাও কিন্তু একপ্রকার দায়মুক্তি দেওয়া।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনও সরকারি সংস্থার ভূমিকা নিয়ে গতকাল কথা বলেন। তিনি বলেন, রাজউকের আরও বেশি সজাগ হওয়া উচিত।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের আগুনে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৪ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। দুজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার তদন্তে সরকারি সংস্থার গাফিলতির চিত্র উঠে আসে। কিন্তু তাদের ‘দায়মুক্তি’ দেওয়া হয়।

নিয়মিত আগুন

ঢাকায় নিয়মিত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদামে বিস্ফোরণে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। এর এক মাস পরই এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালে ঢাকার মগবাজারে একটি ভবনে এবং ২০২৩ সালে সিদ্দিক বাজার ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার দুটি ভবনে বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৪ জন।

২০২৩ সালে ঢাকার বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, নিউমার্কেট ও কৃষি মার্কেটে আগুন লাগে। এতে হতাহতের ঘটনা কম। তবে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি। ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের আরও ঘটনা রয়েছে, সেসব ঘটনায় মৃত্যুও হয়েছে।

আরও পড়ুন

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিদর্শনে ভবনে অগ্নিঝুঁকির চিত্র নিয়মিতই বেরিয়ে আসে। যেমন ২০২৩ সালে তারা সারা দেশে ৫ হাজার ৩৭৪টি ভবন পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ২ হাজার ১১৮টি ভবনে ঝুঁকি খুঁজে পায়। ৪২৪টি ভবনকে তারা অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

২০২০ সাল থেকে চার বছরে ফায়ার সার্ভিস ২৪ হাজার ১৯৩টি ভবন পরিদর্শন করেছে। ভবনগুলোর মধ্যে ৭ হাজার ৮০১টিতে অগ্নিঝুঁকি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮০৩টি অতি অগ্নিঝুঁকিতে ছিল। সব কটি ভবন কর্তৃপক্ষকেই অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে।

রাজধানীর বেইলি রোডের পুড়ে যাওয়া ভবন গ্রিন কোজি কটেজ। শুক্রবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ২০২০ সাল থেকে ঢাকায় যেসব ভবনে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সব কটিই তাদের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ছিল। ফলে দেখা যাচ্ছে, যথাসময়ে অগ্নিঝুঁকি নিবারণে ব্যবস্থা নেওয়া হলে ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার সুযোগ ছিল। বেইলি রোডের ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যুর পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি যে অগ্নিঝুঁকিতে ছিল, তা তিন দফা চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন তাঁরা। কোনো ভবন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ফায়ার সার্ভিস কেন শুধু চিঠি দেয়, কেন ভবন সিলগালা করা হয় না, সেটা জানতে চাওয়া হয়েছিল সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইনে (২০০৩) তাঁদের মামলা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে বিধিমালা স্থগিত আছে। এ কারণে চিঠি দেওয়া ছাড়া তাঁদের করার কিছু থাকে না। তিনি বলেন, ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

২০২৩ সালের এপ্রিলে মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে ঢাকার ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি বিপণিবিতান ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) বিপণিবিতানে ভয়াবহ আগুন লাগে। এই পাঁচটি বিপণিবিতানই অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে একাধিকবার সতর্ক করেছিল ফায়ার সার্ভিস। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সকে ১০ বার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকেও চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। তবে কেউ ব্যবস্থা নেয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা বলে কিছু ছিল না। ২০১৯ সালের পর ফায়ার সার্ভিস ঢাকার বিপণিবিতানগুলো পরিদর্শন করে ১ হাজার ৪৮টি বিপণিবিতানকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। বিপণিবিতান কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

২০২৩ সালের এপ্রিলে মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে ঢাকার ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি বিপণিবিতান ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) বিপণিবিতানে ভয়াবহ আগুন লাগে। এই পাঁচটি বিপণিবিতানই অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে একাধিকবার সতর্ক করেছিল ফায়ার সার্ভিস।
আগুনে ভেঙেচুরে গেছে ভবনের সবকিছু
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখানে দোষারোপ করে আসলে লাভ নেই। অনেক বিপণিবিতান আছে ঝুঁকিপূর্ণ, যেগুলো ভেঙে ফেলা প্রয়োজন। কিন্তু ভবন না ভাঙার বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা নিয়ে আসে বিপণিবিতানের দোকান মালিক সমিতি। ফলে সেখানে কিছু করার থাকে না। তিনি বলেন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ভাঙতে গিয়েও সিটি করপোরেশন একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল।

বেইলি রোডের আগুনে শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) গতকাল একটি মানববন্ধন করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সেখানে শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আজকে নাহিয়ান কালকে কে?’ ‘এই দায়িত্বহীনতার দায়ভার কার?’

বেইলি রোডে আগুনেও সিটি করপোরেশনের দায় রয়েছে বলে মনে করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, অনুমোদন ছাড়া ভবনজুড়ে রেস্তোরাঁ ও দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই সিটি করপোরেশন ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে।

জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির সিইও মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার সময় নাগরিকদের সেবাটা যেন সহজ হয় সেটা চিন্তা করা হয়। চুক্তিপত্র ও সাধারণ কয়েকটি বিষয় দেখে ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

বেইলি রোডে আগুনে হতাহতের স্বজনেরা বলছেন, রাজউক কিছু দেখবে না, সিটি করপোরেশন লাইসেন্স দিয়ে দেবে, ফায়ার সার্ভিস শুধু চিঠি দেবে—তাহলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কী করে। বেইলি রোডের আগুনে শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) গতকাল একটি মানববন্ধন করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সেখানে শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আজকে নাহিয়ান কালকে কে?’ ‘এই দায়িত্বহীনতার দায়ভার কার?’

গাফিলতির প্রমাণ, ব্যবস্থা নেই

বেইলি রোডে আগুনে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকার মগবাজার, সিদ্দিক বাজার ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার তিনটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তকারীদের ভাষ্যমতে, সব কটি বিস্ফোরণ ঘটে পাইপলাইনের ছিদ্র দিয়ে বের হওয়া গ্যাস জমে। এ ক্ষেত্রে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে কোন ঘটনায় কে দায়ী, তা নিরূপণ করা যাচ্ছে না।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তিতাসের দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না, মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

মগবাজার ও সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার রহমতউল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দুটি মামলাতেই শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

সিদ্দিক বাজারে কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনের বেজমেন্টে গত বছরের ৭ মার্চ বিস্ফোরণে ২৬ জনের মৃত্যুর পর জানা যায়, রাজউকের অনুমোদন না নিয়েই পাঁচতলা ভবন সাততলা করা হয়। এর আগে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদামে বিস্ফোরণের ঘটনায় সিটি করপোরেশন, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকির ঘাটতি উঠে এসেছিল।

চুড়িহাট্টার ঘটনায় বাবা হারানো মো. আসিফ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটির প্রায় পাঁচ বছর হয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত শুধু মামলার বাদী হিসেবে তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে; আর কারও নয়। তিনি বলেন, মামলা কত দিন চলবে, ন্যায়বিচার পাবেন কি না, তা নিয়ে তিনি সংশয়ে রয়েছেন।

২০১০ সালে নিমতলীতে রাসায়নিক গুদাম থেকে ছড়ানো আগুনে ১২৬ জনের মৃত্যুর পরও বিভিন্ন সংস্থার গাফিলতির চিত্র উঠে আসে। তখন থেকেই বলা হচ্ছে, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

দুটি মামলাতেই শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার রহমতউল্লাহ চৌধুরী

‘তা না হলে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে’

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহাম্মেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হলে ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে; তা না হলে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

চুড়িহাট্টায় আগুনের পর পুরান ঢাকাকে রাসায়নিকমুক্ত করতে সব সংস্থার সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান শুরু হয়েছিল। কিছুদিন পরই তা থেমে যায়।

প্রথম আলো অনলাইনে গতকাল বেইলি রোডের আগুন নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের মন্তব্যের ঘরে এক পাঠক লিখেছেন: দুর্ঘটনার পর জানা যায়, গাড়ির ফিটনেস ছিল না; ভুল চিকিৎসার পর জানা যায়, ক্লিনিকের লাইসেন্স ছিল না; আগুন লাগার পর জানা যায়, ভবনের নকশায় ত্রুটি, তাহলে প্রশ্ন একটাই—সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আগে কী করেন?

ঢাকা মেডিকেলে অগ্নিদগ্ধ এক স্বজনের পরিবারের কান্না।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো