নারী অধিকারে প্রাপ্তি অনেক, আছে বঞ্চনাও: মহিলা পরিষদ

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সংগঠন গড়ি, নতুন সমাজ বিনির্মাণ করি’ স্লোগানে শনিবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জাতীয় পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতার ৫২ বছর পর নারীর অগ্রগতিতে প্রাপ্তি অনেক। নারীর অধিকার বিষয়ে অনেক দূর এগোলেও সামাজিক কিছু রক্ষণশীলতা আছে। সমাজে এখনো লিঙ্গবৈষম্য প্রকট। তাই নারীর অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে হলে তৃণমূল থেকে কাজ করতে হবে।

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সংগঠন গড়ি, নতুন সমাজ বিনির্মাণ করি’ স্লোগানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জাতীয় পরিষদ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে শনিবার সকালে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সর্বোচ্চ পদে থাকলেও নারী নিরাপদ নন। অগ্রগতিতে নারীদের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় নারীর সম্ভ্রমহানির মতো সামাজিক ধারণা থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে। নারী-পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে, নারীর অংশীদারত্ব বৃদ্ধি করতে হলে পুরুষকে এই আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে। দীপু মনি সাইবার স্পেসে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকার ওপর জোর দেন।  

দেশের নেতৃত্বের উচ্চপর্যায়ে নারীরা থাকলেও এখনো নারী বঞ্চনার শিকার বলে উল্লেখ করেন জাতীয় অধ্যাপক স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিশেষজ্ঞ ডা. শাহলা খাতুন। তাঁর দাবি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। নারীদের প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে যথাযথ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।

নারীর প্রতি বৈষম্য রোধে মহিলা পরিষদের ভূমিকা তুলে ধরেন তথ্য কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম। তিনি সাংগঠনিক সক্ষমতার মাধ্যমে এলাকার নারী ও কন্যাশিশুদের অগ্রগতির জন্য সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার আহ্বান জানান।  

সামাজিক প্রথা, বৈষম্যপূর্ণ সামাজিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে মহিলা পরিষদের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সক্ষমতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডে। তিনি বলেন, ‘এসডিজি প্রতিবেদন অনুসারে, নারীদের কাজ হারানোর হার বাড়ছে। বিনা মজুরিতে কাজের বোঝা বাড়ছে। এ জন্য বঞ্চিত নারীদের কণ্ঠস্বরকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনার জন্য মহিলা পরিষদের  জোরালো ভূমিকা রয়েছে।’

সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বেগম রোকেয়ার সময় থেকে আজকের নারীর অবস্থানে অনেক পরিবর্তন এসেছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য থেকে। সমাজে রক্ষণশীলতাকে ভেঙে নারী উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি তাঁর বক্তব্যে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধিক সংখ্যক নারী নেতৃত্ব তৈরি, সিডও সনদ বাস্তবায়নসহ সব আন্তর্জাতিক সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন, নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে তৃণমূলে সৃজনশীল উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, তথ্যপ্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের আহ্বান জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে র‌্যালি হয়। এরপর জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘গৎ বাঁধা সামাজিক প্রথা ও পুরুষতান্ত্রিকতা’, ‘বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক মানবিক শিক্ষা নারী প্রগতির জন্য অপরিহার্য’, ‘নারীর ক্ষমতায়ন: সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর পূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহণ এবং নারী আন্দোলনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংগঠন গড়ে তুলি’, এসব বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় ও কয়েকটি জেলার নারীনেত্রীরা।