বেইলি রোডে আগুন লাগা ভবনটি ২০ ঘণ্টা পরও বিদ্যুৎহীন, ফিরছেন ব্যবসায়ীরা
রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবন ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টারের ভূ–গর্ভস্থ (বেজমেন্ট) তলায় আগুন লাগার ২০ ঘণ্টা পর আজ মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকেও ভবনটির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎহীন রয়েছেন ভবনের বাসিন্দারা।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বহুতল ভবনটির ভূগর্ভস্থ তলায় জেনারেটর রাখার কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত। যদিও শুরুতে বলা হয়েছিল, ভবনের নিচতলায় থাকা একটি রেস্তোরাঁয় আগুন লেগেছে। ভবনটি থেকে ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বহুতল ভবনটির ভূ–গর্ভস্থ তলায় জেনারেটর রাখার কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত। যদিও শুরুতে বলা হয়েছিল, ভবনের নিচতলায় থাকা একটি রেস্তোরাঁয় আগুন লেগেছে। ভবনটি থেকে ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা বলছেন, আগুনে ভবনের নিচতলায় থাকা কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভবনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা একে একে এসে দোকান খুলছেন। যাঁদের দোকানে সমস্যা হয়েছে, তাঁরা সেগুলো মেরামত করতে শুরু করেছেন।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ১৭ তলা ভবনটি ব্যবসায়িক ও আবাসিক কাজে ব্যবহার করা হয়। নিচতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাকি তলাগুলো আবাসিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভবনের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ভবনটিতে অর্ধশতাধিক পরিবার বসবাস করে।
ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টারে বসবাস করা সরকারি চাকরিজীবী নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘অফিস শেষে মাত্র বাসায় এসেছি। তখনই আগুন লাগার খবর পাই। অসুস্থ মাকে নিয়ে খুব আতঙ্কে নিচে নেমে আসি। পরে আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারিনি। বাসায় রান্নাবান্নাও হয়নি।’
১৭ তলা ভবনটি ব্যবসায়িক ও আবাসিক কাজে ব্যবহার করা হয়। নিচতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাকি তলাগুলো আবাসিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভবনের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ভবনটিতে অর্ধশতাধিক পরিবার বসবাস করে।
অপর একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে দুই বাচ্চাকে নিয়ে দ্রুত নেমে আসি। আতঙ্কে গতরাতে বাসার কেউ ঘুমাতে পারেনি। এখন পর্যন্ত ভবনে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়নি। বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে।’
ভবনটিতে বাইরের কেউ যাতে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য পাহারা বসিয়েছে পুলিশ। পাহারার দায়িত্বে থাকা রমনা থানা–পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা একে একে এসে দোকান খুলছেন। যাঁদের দোকানে সমস্যা হয়েছে, তাঁরা সেগুলো মেরামত করতে শুরু করেছেন।’
ভবনের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা কেমন ছিল, ভবনের নকশা সঠিক রয়েছে কি না—এ বিষয়গুলো তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। তাই ভবনমালিকের কাছে এসবের কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।
আগুনে ক্ষতির শিকার হওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইন স্টাইল বাই রাইস–এর ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিকট শব্দ শুনতে পান। ভয়ে ব্যবসায়ীরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। শুরুতে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে থাকা ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন ব্যবসায়ীরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান।
রিয়াজুল ইসলাম জানান, আগুন ও ধোঁয়ায় তাঁর প্রতিষ্ঠানে থাকা বেশ কিছু কাপড় নষ্ট হয়েছে। বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ভবনটির আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিচতলার পূর্ব পাশের দুটি দোকান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকি দোকানগুলোর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাঁরা জানান, আগুনে ভবনটির বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনে ক্ষতি হয়েছে। তাই আগুন নেভানো গেলেও এখনো বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়নি।
ভবনটিতে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা যথাযথ ছিল বলেও দাবি ব্যবসায়ীদের। তাঁরা বলছেন, গত বছর বেইলি রোডের অন্য একটি ভবনে আগুনের ঘটনার পর তাঁদের ভবনটি ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পরিদর্শন করা হয়েছিল। তাদের নির্দেশনা মেনেই অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ভবনের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা কেমন ছিল, ভবনের নকশা সঠিক রয়েছে কি না—এ বিষয়গুলো তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। তাই ভবনমালিকের কাছে এসবের কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে থাকা রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়।