মশা মারার কাজ দেরিতে শুরু, আগেই শেষ

সকাল-বিকেল মিলিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে দিনে ৮ ঘণ্টা মশা মারার ওষুধ ছিটানোর কথা। তবে ১ নম্বর ওয়ার্ডে গতকাল তা মানা হয়নি।

মশা মারার কাজে ব্যস্ত এক কর্মী। গতকাল বিকেলে খিলগাঁওয়েছবি: প্রথম আলো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মশার প্রজননস্থলে সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ওষুধ ছিটানোর কথা। আর উড়ন্ত মশা মারতে ওষুধ ছিটানোর কথা বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত। সকাল-বিকেল মিলিয়ে দিনে আট ঘণ্টা ওষুধ ছিটানোর নির্দেশনার বিষয়টি ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে।

তবে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডে মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়েছে পাঁচ ঘণ্টা। সকালে ওষুধ ছিটানোর কাজটি শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর। একইভাবে বিকেলেও এক ঘণ্টা দেরিতে কাজটি শুরু হয়। কিন্তু কাজ শেষ করা হয় বেঁধে দেওয়া সময়ের এক ঘণ্টা আগে।

গতকাল সকালে ও বিকেলে দুই দফায় এই ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটা মোটরসাইকেলে করে ঘুরেছেন এই প্রতিবেদক। মশার উপদ্রব কেমন—এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল স্থানীয় পাঁচ বাসিন্দাকে। তাঁদের সবার উত্তর ছিল একই—সন্ধ্যার পর মশার যন্ত্রণায় ঘরে টেকা কঠিন। আরও বলেছেন, ঈদের পর গতকালই প্রথমবারের মতো ওষুধ ছিটাতে দেখেছেন তাঁরা। যে পাঁচজনের সঙ্গে প্রথম আলো কথা বলেছে, তাঁদের তিনজন তিনটি বাড়ির প্রহরী।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খিলগাঁও এলাকার তিলপাপাড়া, তারাবাগ, প্রভাতীভাগ, সি ব্লক ও এ ব্লক নিয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডে জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। ওয়ার্ডে মশকনিধন কর্মী ১৩ জন। এর মধ্যে সকালে সাতজন আর বিকেলে ছয়জন কাজ করেন।

আরও পড়ুন
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডে মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়েছে পাঁচ ঘণ্টা। সকালে ওষুধ ছিটানোর কাজটি শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর। একইভাবে বিকেলেও এক ঘণ্টা দেরিতে কাজটি শুরু হয়। কিন্তু কাজ শেষ করা হয় বেঁধে দেওয়া সময়ের এক ঘণ্টা আগে।
আরও পড়ুন

১ ঘণ্টা দেরিতে কাজ শুরু

গতকাল সকাল নয়টা থেকে দক্ষিণ সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন খিলগাঁও গভ. কলোনি উচ্চবিদ্যালয়, খিলগাঁও শাহি জামে মসজিদ, স্থানীয় সংসদ সদস্যের কার্যালয়, সবুজমতি ভবন, খিলগাঁও গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও খিলগাঁও কল্যাণ সোসাইটি এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরে মশকনিধন কর্মীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ হেলালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মশার ওষুধ ছিটাতে তিনি সিটি করপোরেশনের কর্মীদের দেখেছেন কি না? তিনি বলেন, ঈদের পর থেকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি।

পরে মোটরসাইকেলে করে আশপাশের সড়ক ঘুরতে ঘুরতে সকাল পৌনে ১০টার দিকে খিলগাঁও এ ব্লকে অবস্থিত কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনের সড়কে মশকনিধন কর্মীদের দেখা পাওয়া যায়। তখন তাঁরা মশা মারার ওষুধ নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে মাত্র বের হয়েছেন। ছয়জন মশকনিধন কর্মী ছিলেন সেখানে। সাতজনের মধ্যে বাকি একজন কোথায় জানতে চাইলে মশকনিধন কর্মী আহমেদ আলী বলেন, আরেকজন পাশের ওয়ার্ডে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রামে’ (মশকনিধনে সমন্বিত কর্মসূচি) গেছেন।

আরও পড়ুন
মশার (এডিস) কামড়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল (গতকাল) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সারা দেশে ২৩ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১০ জন মারা গেছেন।

ছয়জন মশকনিধন কর্মীর মধ্যে নুরুল ইসলাম ও আহমেদ আলী খিলগাঁও ঝিলপাড়–সংলগ্ন কবরস্থানের পাশের ডোবায় এক ঘণ্টার মতো ওষুধ ছিটিয়েছেন। জলাশয়ে একধরনের যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁরা ওষুধ ছিটিয়েছেন।

ঝিলপাড়–সংলগ্ন কবরস্থান এলাকায় দুজন মশকনিধন কর্মী যখন ওষুধ ছিটাচ্ছিলেন, তখন সেখানে অবস্থান করছিলেন একটি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী সুমন মিয়া। তিনি বলেন, সন্ধ্যা হলে বোঝা যায় মশা কাকে বলে!

আরও পড়ুন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৯৯ জন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭৯।

চার ঘণ্টার কাজ দুই ঘণ্টায়

করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত মশার ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও গতকাল ১ নম্বর ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানো হয়েছে মাত্র দুই ঘণ্টা। মশকনিধন কর্মীরা জানান, চার ঘণ্টা ধরে মশা মারার ওষুধ (সাধারণভাবে ফগিং বলা হয়, যা আসলে ওষুধমিশ্রিত ধোঁয়া) ছিটানোর কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা দুই ঘণ্টাতেই কাজ শেষ করেছেন।

বিকেলের পালায় কাজ করা ছয় মশকনিধন কর্মীর মধ্যে চারজনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের সঙ্গে কথা হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কাউন্সিলরের কার্যালয়ের কাছের একটি সড়কে। তখন তাঁরা কাজ শেষ করে ফিরছিলেন। তাঁরা বলেন, বেলা সাড়ে তিনটায় কাজে বেরিয়েছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করেছেন।

আরও পড়ুন

যদিও তাঁদের কাজে বের হওয়ার কথা বেলা আড়াইটায়, শেষ করার কথা সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। চার ঘণ্টার কাজ কীভাবে দুই ঘণ্টায় শেষ হলো—এমন প্রশ্নে এই ওয়ার্ডে মশকনিধনের কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা (সুপারভাইজার) সাইফ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির কারণে গতকাল কাজে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।

নিয়ম হচ্ছে, মশকনিধন কর্মীরা হেঁটে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ফগিং করেন। চার ঘণ্টার জায়গায় দুই ঘণ্টা ফগিং করার অর্থ হচ্ছে, অনেক এলাকায় ওষুধ ছিটানো হয়নি।

খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া এলাকার ২০ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ইউনুছ মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাড়ির নিচতলায় থাকি। মশার যন্ত্রণা কাকে বলে, তা আমরা বেশি টের পাই। মাঝেমধ্যে ওষুধ ছিটাতে দেখি। তবে মশা কমে না।’

মশার (এডিস) কামড়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল (গতকাল) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সারা দেশে ২৩ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১০ জন মারা গেছেন।

আরও পড়ুন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৯৯ জন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭৯।

যদিও এখন ডেঙ্গুর মৌসুম নয় বলে জানান জনস্বাস্থ্যবিদেরা। তাঁরা বলছেন, সাধারণত মে থেকে অক্টোবর মাসে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। কিন্তু এবার ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছে। এখন থেকেই মশকনিধনের কাজে সিটি করপোরেশনকে আরও মনোযাগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।