ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের তাগিদ

রাজধানীর সিবিসিবি মিলনায়তনে আজ বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের (বিআইডব্লিউএন) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন হয়ছবি: বিআইডব্লিউএনের সৌজন্যে

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। তাঁদের এসব সমস্যা একযোগে সমাধান করতে হবে। এ জন্য চাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের (বিআইডব্লিউএন) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে বক্তাদের কথার মূল সুর ছিল এমনই।

আজ শুক্রবার ঢাকার মোহাম্মদপুর আসাদ অ্যাভিনিউয়ের সিবিসিবি মিলনায়তনে এ সম্মেলন হয়। সম্মেলনের শ্লোগান ছিল ‘আদিবাসী নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার করুন’।

 দুই দিনের এ সম্মেলনের আজ প্রথম দিনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক মিনু মারিয়া আরেং। সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির। তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যা আমাদের সবাইকে মোকাবিলা করতে হবে।’ ‘বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক’ যেন নারীদের উন্নয়নে কাজ করতে পারে, তিনি এই আশা ব্যক্ত করেন।

খুশী কবির বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জাতি–ধর্মনির্বিশেষে সবাই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। যেখানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির সমস্যার কথা তুলে ধরে সবাইকে একসঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান খুশি কবীর।

সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের বহুবিধ সমস্যা রয়েছে। নারীদের সমস্যা আরও বেশি। আমরা কার কাছে যাব, কার কাছে বিচার পাব। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের নির্যাতনের একটাও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দেখা যায় না। এ জন্য আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের যোগাযোগটা আরও নিবিড় করা উচিত।’

পাহাড়ের নেতা ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছর অতিবাহিত হয়েছে; অথচ চুক্তির মূল বিষয়গুলো এখনো অবাস্তবায়িত। পার্বত্য চুক্তি এখন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯০০ সালের শাসনবিধি আইন চক্রান্ত করে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই আইন আমাদের অধিকারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমাদের অধিকার আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে আদায় করে নিতে হবে।’

অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজোয়ানা বলেন, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পৃথক আইন দরকার।

নারী নেত্রী রেখা সাহা বলেন, ‘মূলধারার আন্দোলনের সঙ্গে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারী আন্দোলন যুক্ত হওয়া, এটাও একটা অর্জন। সবার ওপর মানুষ সত্য, আসুন সবাই মিলে মানবতার মানবিক আন্দোলন গড়ে তুলি।’

মধুপুরের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নেতা অজয় এ মৃ বলেন, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ককে সারা বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের জন্য ছাতা হিসেবে তৈরি করা দরকার।

উদ্বোধনী অধিবেশনে ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে আছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা, সহিংসতার শিকারদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া, জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশীদারত্ব নিশ্চিত করা। এর পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়। শিক্ষা, চাকরিক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিও ছিল এ ১১ দফা।

আজকের বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমি, কাপেং ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন গৌরাঙ্গ পাত্র, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি বিচিত্রা তিরকি, রাঙামাটি সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রিতা চাকমা ও এআইপিপির কার্যনির্বাহী সদস্য চন্দ্রা ত্রিপুরা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা।

সম্মেলনে বিভিন্ন জেলা থেকে ১০০ জনের বেশি প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশ নেন।