শাহবাগে বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিপেটা

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শাহবাগ মোড়ে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের সমাবেশে লাঠিপেটা করে পুলিশ। ঢাকা, ৭ আগস্ট
ছবি: দীপু মালাকার

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর বিক্ষোভ সমাবেশে ব্যাপক লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

পুলিশের এই হামলার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে ‘প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসমূহের’ নেতারা।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শাহবাগ মোড়ে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের সমাবেশে লাঠিপেটা করে পুলিশ। ঢাকা, ৭ আগস্ট
ছবি: দীপু মালাকার

‘জ্বালানি তেলের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ও লুটপাটের’ প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বামপন্থী নয়টি ছাত্রসংগঠন। ‘প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসমূহের’ ব্যানারে মিছিলটি শাহবাগ ও কাঁটাবন মোড় ঘুরে আবার শাহবাগ মোড়ে এসে সমাবেশ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশের সমাপনী বক্তা ছিলেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদেকুল ইসলাম। তিনি সমাবেশ থেকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবির পাশাপাশি সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বক্তব্য চলাকালে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে পুলিশ হঠাৎ সমাবেশের নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা শুরু করে। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বিক্ষোভকারীদের জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত দিয়ে আসে পুলিশ।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শাহবাগ মোড়ে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের সমাবেশে লাঠিপেটা করে পুলিশ। ঢাকা, ৭ আগস্ট
ছবি: দীপু মালাকার

পুলিশের লাঠিপেটায় বিক্ষোভকারীদের অনেকে আহত হন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা শান্তা ইসলাম, জাওয়াদুল ইসলাম, সাহাদাত হোসাইন, রাকিব ও ইমন; সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা সালমান সিদ্দিকী, শ্যামল দাস, ইভান তৌসিফ, শাহরিয়ার অনিক ও মিশাল ত্রিপুরা, সুহাইল আহমেদ, ফেরদৌস বাঁধন ও লাবনী বন্যা; ছাত্র ফেডারেশনের একাংশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি দীপা মল্লিক, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর নেতা জাবির আহমেদ, সামি আবদুল্লাহ ও ফখরুল আহমেদ; গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের নেতা ছায়েদুল হক ও তানজিদ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের নেতা আবদুল মোমিন ও আদনান প্রমুখ।

বিক্ষোভকারী ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ। এই বিষয়ে মুঠোফোনে হারুন অর রশিদের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলার অভিযোগ অসত্য। পুলিশ তাদের (ছাত্রসংগঠন) ওপর কোনো হামলা করেনি। তারাই বরং পুলিশের ওপর হামলা করেছে।’

বিক্ষোভকারীরাই যদি পুলিশের ওপর হামলা করে থাকে, তাতে পুলিশের কেউ আহত হয়েছেন কি না, এ প্রশ্ন করা হলে এডিসি হারুন অর রশিদ কিছু না বলেই ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

এদিকে লাঠিপেটার পরে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে টিএসসিতে যান। সেখানে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে পুলিশি আক্রমণের প্রতিবাদে সমাবেশ করেন তাঁরা।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অনিক রায় বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশে বিনা উসকানিতে পুলিশ ন্যক্কারজনক হামলা করেছে। হামলায় অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’

তিনি এই হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সোমবার দুপুর ১২টায় মধুর ক্যানটিন থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হবে।