মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছানোর শক্তিশালী মাধ্যম কার্টুন

‘কার্টুনের রাজনীতি, রাজনীতির কার্টুন’ শিরোনামে প্যানেল আলোচনায় কথা বলছেন শিল্পী রফিকুন নবী। মঞ্চে উপস্থিত বাঁ থেকে নাসরীন সুলতানা, শিশির ভট্টাচার্য্য, আফসান চৌধুরী, রফিকুন নবী, আনিসুল হক ও মেহেদী হক। সোমবার রাজধানীর ইএমকে সেন্টারেছবি: প্রথম আলো

রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটে কার্টুন সব সময়ই প্রতিবাদ ও সংগ্রামের এক কৌশলী হাতিয়ার। বিশ্বজুড়ে কার্টুন হচ্ছে গণযোগাযোগের শক্তিশালী একটি মাধ্যম। বাংলাদেশেও কার্টুন আঁকা ও প্রকাশের ইতিহাস সমৃদ্ধ। তবে নানা সময় এর গতিপথ বদলেছে। নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও শিল্পটি এগিয়ে যাচ্ছে। তবে তরুণ শিল্পীদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম তৈরির বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

রাজধানীর ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে গতকাল সোমবার শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কার্টুন প্রদর্শনী ও কর্মশালা। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘পলিট্রিকস’। গতকাল সেখানে ‘কার্টুনের রাজনীতি, রাজনীতির কার্টুন’ শিরোনামে এক প্যানেল আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। এ কর্মশালা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে রম্য গ্যাগ সাইট ‘ই-আরকি’। চলবে ২৯ মার্চ পর্যন্ত।

গতকাল দুপুরে এ কর্মশালা ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পী রফিকুন নবী। পরে প্যানেল আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ অনেক কার্টুনের পেছনের ইতিহাস এবং প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়ার গল্প।

আলোচনায় রফিকুন নবী তাঁর সৃষ্ট কার্টুন চরিত্র টোকাই এবং স্বৈরশাসনামলে টোকাইকে নিয়ে রাজনীতির গল্প শোনান। একটি কার্টুন কীভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারে, সে উদাহরণ দেন তিনি। তরুণ কার্টুনিস্টদের আরও বেশি কৌশল অবলম্বন করে কাজ করার দক্ষতা অর্জনে উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে আঁকতে চায়, সে যেমন করেই হোক কার্টুন আঁকবে।’

আলোচনায় শিল্পী ও কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য্য তুলে ধরেন স্বৈরশাসনামলে তাঁর কার্টুনগুলো কীভাবে রাজনৈতিক কার্টুন হয়ে উঠেছিল, সে ইতিহাস। শক্তিশালী এই শিল্পমাধ্যম সব সময় শুধু বিনোদনের মধ্য দিয়ে নয়, বিষাদময় উপস্থাপনের ভেতর দিয়েও গভীর বার্তা দেয়, এমন উদাহরণ দেন তিনি।

উদ্বোধনের পর প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন শিশির ভট্টাচার্য্য, আফসান চৌধুরী ও রফিকুন নবী। সোমবার রাজধানীর ইএমকে সেন্টারে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কার্টুন প্রদর্শনী ও কর্মশালা
ছবি: প্রথম আলো

আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ ও গবেষক আফসান চৌধুরী। কাজ প্রকাশের জন্য সংবাদপত্রের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে তরুণ শিল্পীদের পরামর্শ দেন তিনি। আর ই-আরকির সম্পাদক ও লেখক সিমু নাসের জানান, অগ্রজদের সঙ্গে নতুনদের কাজের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই তাঁদের এ আয়োজন।

লেখার মধ্য দিয়েও যে কার্টুন আঁকা যায়, তা উঠে আসে কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হকের আলোচনায়। ছবি না এঁকে তিনি নিজের গদ্যের মধ্য দিয়ে কার্টুনের হিউমার (হাস্যরস) তৈরির চেষ্টা করেন বলে জানান।

তবে সব আলোচকের কথাতেই বারবার এসেছে সম্পাদনার চাপে বারবার এ শিল্পমাধ্যমে বাধা আসার প্রসঙ্গটি। আরও সূক্ষ্মভাবে কাজ করে নিজের মেধা প্রকাশ করাকে একটি চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন কার্টুনিস্ট নাসরিন সুলতানা। আর আঁকার আগে মূল বক্তব্যের সঙ্গে শিল্পীর আরও গভীর বোঝাপড়ার পরামর্শ দেন কার্টুনিস্ট মেহেদী হক।

ইএমকে সেন্টারে এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ১৪৫টি রাজনৈতিক কার্টুন। সেখানে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজী আবুল কাসেমের আঁকা কার্টুন থেকে রয়েছে ২০২৩ সালে প্রকাশিত জনগুরুত্বপূর্ণ ঘটনার অনেক কার্টুন। রয়েছে কামরুল হাসান, রফিকুন নবী, শিশির ভট্টাচার্য্য, শাহরিয়ার খান, আসিফুল হুদা, আহসান হাবীব, আরাফাত করিমের মতো কয়েক প্রজন্মের শিল্পীদের আঁকা কার্টুন। আগামীকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে।