ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আধুনিক সময়ের ‘ঔপনিবেশিক আইন’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবাদী সমাবেশ করে। শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে
ছবি: সাজিদ হোসেন

অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ ‘নিবর্তনমূলক’ সব আইন বাতিল, এ আইনে করা মামলা প্রত্যাহার ও বন্দীদের মুক্তিসহ চার দফা দাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে বামধারার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘প্রতিবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের’ ব্যানারে এ সমাবেশ হয়।

সমাবেশে বিভিন্ন পেশার মানুষেরা বলেন, সংবিধানে দেওয়া জনগণের অধিকার রক্ষা করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে আধুনিক সময়ের ‘ঔপনিবেশিক আইন’। অবিলম্বে এ আইন বাতিল করতে হবে।

সমাবেশ থেকে আরও তিনটি দাবি জানানো হয়—অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা খাতের অজুহাতে শ্রমিক ধর্মঘটের অধিকার হরণের অপচেষ্টা ও জনস্বার্থবিরোধী আইন প্রণয়নের অপতৎপরতা বন্ধ করা; নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা; অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া ও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিরাপত্তার অজুহাতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া বন্ধ করে সংস্কৃতিচর্চার মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব ‘নিবর্তনমূলক’ আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ৫৪ ধারায় যাতে গ্রেপ্তার করতে না পারে, সে জন্য আপিল বিভাগ ১৫টি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কাউকে গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে তাঁর নিকটতম আত্মীয় ও আইনজীবীদের জানাতে হবে, গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে তা জেলখানায় বা আইনজীবীদের সামনে করতে হবে। এসবের কোনোটাই সাধারণ জনগণের জন্য মানা হচ্ছে না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘আধুনিক সময়ের ঔপনিবেশিক আইন’ বলে আখ্যা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ নয়, এই আইন সরকারের অবমাননা বা সমালোচনা ঠেকানোর জন্য করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের তোয়াজ-প্রশংসা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই আইনের সংস্কারের কথা হাস্যকর। এ ধরনের নিবর্তনমূলক আইন বাতিলের কোনো বিকল্প নেই।

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, আজকে দেশে মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। কথা বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এ আইনে বহু মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বললেই মামলা দেওয়া হচ্ছে।

একই রকম মন্তব্য করেন প্রগতি লেখক সংঘের সহসভাপতি জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বুদ্ধিজীবীরা অন্ধ হয়ে গেছেন।’

বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক আমিরুন নূজহাতের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি বদিউর রহমান, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের সংগঠক রঘু অভিজিৎ রায়, সংহতি সংস্কৃতি সংসদের নেতা ইফতেখার আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে সশরীর উপস্থিত হতে না পারলেও এতে সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।