দিল্লি থেকে পুরান ঢাকা : যেমন ছিল শত বছর আগের ঈদ

ঢাকার নবাবদের আয়োজনে হতো বাহারি ঘোড়দৌড়। ঈদ উৎসব তখনও আমজনতার হয়নিছবি: সংগৃহীত

হাতি এনে বসানো হলো বাদশাহর সামনে। পাশে হাওদায় রাখা রত্নখচিত শৈল্পিক কেদারায় বসলেন বাদশা। কেদারা তুলে দেওয়া হলো হাতির পিঠে। হাতিযোগে বাদশা আর পদযোগে রাজকর্মচারীরা চললেন দিল্লির ঈদগাহ অভিমুখে নামাজ পড়তে। মোগল আমলের শেষ দিকের ঈদ–মিছিলের এমন বর্ণনা পাওয়া যাবে ‘বাজম-ই আখির’ নামের লেখা উর্দু কাব্যগ্রন্থে। সতেরো শ শতকে লেখা হয় এই কাব্যগ্রন্থ।

সেই সময়ের একই রকম দৃশ্য উঠে এসেছে পুরান ঢাকার ঈদ–মিছিল নিয়ে আঁকা আলম মুসাওয়ার নামের এক শিল্পীর জলরঙে আঁকা চিত্রে। সতেরো শ শতকের প্রথম দিকে আঁকা ছবিতে বোঝা যায়, ঢাকায়ও তখন ঈদ উদ্‌যাপন হয়েছে জাঁকজমকভাবে। তবে এর সবই ছিল মোগল বাদশাহ, সুবেদার ও বিত্তবানদের জন্য।

ঈদ গণমানুষের উৎসব ও অংশগ্রহণের হয়েছে ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার পর। তখন পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে আবার ফিরে এসেছে মোগলরীতির ঈদ–ঐতিহ্য। গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের পুরান ঢাকার ঈদে ছিল সেই ছাপ, যা এখনো বর্তমান এখানকার প্রবীণদের শৈশবস্মৃতিতে।

তাঁরা বলছেন, বুড়িগঙ্গার স্বচ্ছ পানিতে চাঁদ দেখার ঘটনা কয়েক দশক আগেও সত্যি ছিল। ঈদ–মিছিলের জাঁকজমক দেখতে দর্শক আসতেন নানা জায়গা থেকে। ইতিহাসবিদ, গবেষকেরা বলছেন দ্রুত নগরায়ণ, মহল্লা প্রথা ভেঙে যাওয়া এবং ভোক্তা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রসারের কারণে বদলে যাচ্ছে সেই ঐতিহ্য।

দিল্লির আকাশের চাঁদ দেখা যেত বুড়িগঙ্গায়

দিল্লির লালকেল্লায় চাঁদ দেখার খবর সম্রাটের কানে পৌঁছানোর পর ‘নাকাখানা’ থেকে তোপধ্বনি করার মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হতো শহরবাসীকে। তবে চাঁদটি যে কেল্লা থেকে দেখা যাবেই, এমন নিশ্চয়তা ছিল না। তাই মোগল বাদশাহরা নিশ্চিত হতে ঘোড়সওয়ার পাঠিয়ে দিতেন শহরের নানা দিকে। অশ্বারোহীরা দূরে দূরে বিভিন্ন টিলায় উঠে যেত চাঁদ দেখতে। সেই হুলুস্থুল ব্যাপার ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে ক্ষমতার পালাবদলে। একসময় খোদ বাহাদুর শাহ জাফরকে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে ইংরেজ শাসকদের নজরদারিতে। তবে মোগল বাদশাহর মতো এত জাঁকজমক না থাকলেও পুরান ঢাকার বিত্তবানদের শখও কম ছিল না চাঁদ দেখা নিয়ে। কেউ কেউ তো চলে যেতেন বুড়িগঙ্গায় নৌকা নিয়ে।

এই আয়োজনের বর্ণনা পাওয়া যায় ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত হেকিম হাবীবুর রাহমানের ‘ঢাকা পাচাস বারাস পাহ্‌লে’ গ্রন্থে। তিনি বলেছেন, ‘অতি শৌখিন লোকেরা নৌকার সাহায্যে মধ্য নদীতে গিয়ে চাঁদ দেখতেন। কিশোর ও যুবক সবাই যেত। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সী লোকেরা নিজের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করার জন্য অবশ্যই যেতেন...অবশেষে চাঁদ দেখা গেল। বন্দুকের গুলি ছোড়া হলো। তোপধ্বনি করা হলো। এমন সরব হলো যে বধিরও জানতে পারল যে চাঁদ উঠেছে।’এ বর্ণনা ১৯৪৫ সালের আগের ঢাকার।

তবে ঢাকার প্রথম শাহী ঈদগাহ নির্মাণের সময়কাল বহু আগের। বাংলা মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে আসার ৪৪ বছর পর ১৬৪০ সালে। সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ সুজার প্রধান অমাত্য মীর কাশিম নির্মাণ করেছিলেন বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত পুরাকীর্তি ধানমন্ডির ঈদগাহটি। এখানে একসময় অনুষ্ঠিত ঈদের প্রধান জামাতে আসতেন সুবা বাংলার সুবাদার, নায়েবে নাজিম ও তাদের পরিষদেরা। সাধারণ মানুষ এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সুযোগ পেয়েছেন অনেক পরে।

সেই আমলে ঢাকায় ঈদের নতুন চাঁদ দেখে তোপধ্বনি দেওয়া হতো কি না, জানা যায় না। তবে দিল্লির লাল কেল্লা থেকে কামান দেগে তোপধ্বনি হতো। মির্জা নাথানের লেখা ‘বাহারীস্তান-ই-গায়বী’ বইতে পাওয়া যায়, সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ দেখা গেলে শিবিরে শাহি তূর্য বেজে ওঠার কথা। এরপর গোলন্দাজ বাহিনী গুলি ও আতশবাজি ছুড়তে শুরু করত।
আর দেশভাগের পর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বর্ণনা দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রর প্রতিষ্ঠাতা, সূত্রাপুরের পঞ্চায়েতপ্রধান আজিম বখশ প্রথম আলোকে বললেন, ‘নদীর পাড়ে চাঁদ দেখতে যাওয়ার উৎসব দিয়ে শুরু হতো পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানানো। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো শেষ রোজার চাঁদ দেখার উৎসবে। বংশাল, আগামসি লেনের মতো যাঁদের বাড়ি নদী থেকে দূরে, তাঁদের যেতে হতো লালবাগ কেল্লায়, উঁচু ভবন থেকে চাঁদ দেখতে।’ তিনি জানান, সেই সময় পিলখানার ভেতর থেকে তোপধ্বনি দেওয়া হতো। চাঁদ দেখা গেলে একসময় নবাববাড়ি থেকেও শোনা যেত তোপধ্বনি। তবে এখন আর নতুন চাঁদ দেখার পর তোপধ্বনির শব্দ শোনা যায় না। কাজটি বিভিন্ন সম্প্রচারমাধ্যমই করে থাকে।

ঈদ–মিছিলে ছিল রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা

মুহম্মদ সাকি মুস্তক খান ও মির্জা মুহম্মদ কাজিম প্রণীত ‘মসির ই আলমগিরি’ নামে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের জীবনীতে উল্লেখ পাওয়া যায়, এই মোগল সম্রাটের অধিকাংশ বিজয় রোজার মাসে হয়েছে। প্রথম দিকে তাই এ মাসে শুরু হয়েছিল উদ্‌যাপন। সংযমের মাস বিবেচনায় পরে উৎসব সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছিল, ঈদের দিন সকাল থেকে পরবর্তী ১০ দিন পর্যন্ত।

এরপর মোগল আমলের শেষ দিকের ঈদ বর্ণনা স্থান পেয়েছে ‘বাজম-ই আখির’ বইতে। উর্দু থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ভারতের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও স্থাপত্য নিয়ে গবেষণা করা প্রখ্যাত লেখক রানা সাফভি। রানা সাফভির ‘হাও দ্য বাদশাহস অব দিল্লি সেলিব্রেটেড ঈদ ডিউরিং দ্য ফাইনাল ইয়ারস অব দ্য মোগল এম্পায়ার’ প্রবন্ধে উল্লেখ পাওয়া যায়, ঈদ মিছিলের কথা। সেখানে উল্লেখ আছে বাহাদুর শাহ জাফর হাতির পিঠে ওঠার জন্য কেদারায় বসার পর তাঁর পাশে বসলেন বাদশাহর ছেলেরা। ঈদগাহ অভিমুখে ঈদের প্রথম জামাত আদায়ের সে যাত্রাই হতো ঈদ মিছিল। মোগল আমলের এই ঐতিহ্য ঢাকা শহরেও এসেছে মোগল আমলেই। প্রসঙ্গত, ঢাকার চকবাজারের শাহী মসজিদ আর দিল্লির জামা মসজিদের নির্মাণকালের মধ্যে ব্যবধান মাত্র ৩০ বছরের মতো।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টকার্ডে দেখা যায়, সতেরো শ শতকের শুরুতে নায়েব নাজিমদের ঈদ উৎসব উদ্‌যাপন, ঈদ মিছিলের দৃশ্য। সেখানে দেখা যাচ্ছে তৎকালীন ঢাকার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র চকবাজার, বড় কাটরার ফটক এবং মীর জুমলার কামান ‘বিবি মরিয়ম’ দৃশ্যমান। ঈদের এই মিছিল নিমতলি প্রাসাদ থেকে বের হয়ে হোসেনি দালান, বেগমবাজার, চকবাজার ঘুরে আবার নিমতলিতে গিয়ে শেষ হচ্ছে। জলরঙে আঁকা শিল্পী আলম মুসাওয়ারের এসব চিত্রকলায় ধরা আছে শত শত বছর ধরে পুরান ঢাকায় মোগল ঐতিহ্যের পরম্পরার কথা।

তবে তখনো ঈদ শুধু বিত্তবানদের। সাধারণ মানুষের কাছে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। একই ধারাবাহিকতায় রাজধানী ঢাকাতে ঈদ মিলিছের জমকালো আয়োজন আবার শুরু হয় দেশভাগের পর পাকিস্তান আমলে। তবে সে মিছিল থেকে সামাজিক সচেতনতা, প্রশাসকদের ব্যর্থতা নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপের কথাও উঠে আসে। ফলে ঈদ মিছিল অনেকটা জড়িয়ে ছিল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। পঞ্চাশ, ষাটের দশকের সেই ঈদ মিছিলের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ঢাকা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আজিম বখশ প্রথম আলোকে বললেন, ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে ভাগ ছিল তখনো। আহলে হাদিসের অনুসারীরা ঈদের জামাত পড়তে যেতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। পুরান ঢাকার ঈদগাহতে নামাজ শেষে এলাকার বিশিষ্টজনেরা যেতেন পঞ্চায়েত সরদারের বাড়িতে। তখন নারীরা ঈদের নামাজ বাড়িতেই পড়তেন।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের ‘পুরোনো ঢাকা উৎসব ও ঘরবাড়ি’ বইয়ে উল্লেখ পাওয়া যায় ‘বাংলাদেশে দুটো ঈদ জাতীয় ধর্মোৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর, যখন থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে ঈদ এবং এখনো যা অব্যাহত ও প্রবল।’

ঈদের খাবার মোগলদের ধারাবাহিকতা

সেকালে ও একালে পুরান ঢাকাবাসীর ঈদের দিনের প্রধান খাবার মোরগ পোলাও
ছবি: প্রথম আলো

উর্দু রোড, আগামসি লেন, বংশালসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লার পুরুষেরা ঈদের সকালে নামাজ পড়তে যান দুধে ভেজানো খোরমা খেয়ে। এর নাম শির খোরমা। কোনো কোনো বাড়িতে সকালেই হয় দুধ সেমাই, জর্দা, লাচ্ছা সেমাই। ফিরে এসে খান পোলাও বা খিচুড়ির সঙ্গে নানা পদের মাংস। এই মিষ্টি মুখে দিয়ে নামাজে যাওয়া মোগল আমলের পরম্পরা। মোগলরা সে ঐতিহ্য ইসলামের দৃষ্টিতে মিষ্টি খাওয়া সুন্নত এমন বিবেচনাতেই করতেন না অভ্যাস থেকে, তা নির্ণয় অসাধ্য।

উর্দু রোডের বাসিন্দা লেখক হুমায়রা হুমা প্রথম আলোকে বললেন, ‘সুপারি কাটার সরতা দিয়ে চিকন করে কেটে রাখা হয় খুরমা। সেটা ভিজিয়ে রাখা হয় দুধের মধ্যে। বাড়ির মা-খালা, স্ত্রী কাজটি আগের রাতে করে রাখেন। পুরুষেরা সেই খাবার মুখে দিয়ে যান নামাজ পড়তে। এই প্রচলন বহুকালের।’ ঈদ উৎসবের মোগল ঐতিহ্যের অনেক কিছু হারিয়েছে এভাবে। তবু রয়েছে রসনাবিলাসের পরম্পরা। মোরগ পোলাও থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি, কোর্মা থেকে কোপ্তা—এর সবকিছুতে মোগলদের রসুইঘরের মতো পেস্তাবাদাম, দুধ, ঘি, জাফরানের ব্যবহার প্রাধান্য পায় পুরান ঢাকার ঈদের রান্নায়।

তবে বংশালের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব নার্গিস শেহনাজ প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমাদের ছোটবেলায় ঘরে পিতলের তৈরি সেমাইয়ের কল দিয়ে সেমাই বানানো হতো। এর নাম ছিল চুটকি। সেটাই রান্না করা হতো ঈদের দিন সকালে। পানি ঠান্ডা করার কায়দা ছিল কর্পূর, ফিটকিরি। ঈদের রান্নার মসলা করে রাখা হতো আগের রাতে। এখন এসব কল্পনা মনে হয়। সময় কোথায় মানুষের!’ নার্গিস শেহনাজের দুই সন্তানই থাকেন এখন বর্ধিত ঢাকায়। তাঁরা ঈদের দিন বংশালের বাড়িতে যান, তবে ঐতিহ্য রক্ষার বাধ্যবাধকতা নেই তাঁদের দ্রুতগতির জীবনে। তিনি অভিযোগ করলেন, পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বলে অনেক কিছু চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এখন, যা আদতে পুরান ঢাকার না। যেমন চকবাজারের ইফতারের আইটেমের নাম বলে অনেক কিছু বিক্রি হয়। কিন্তু একসময় মানুষ কি কেনা খাবারের ওপর নির্ভরশীল ছিল?

ইতিহাসবিদ ও গবেষক হাশেম সূফী জানালেন, ‘ঢাকার ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরোনো হলেও বর্তমান পুরোনো ঢাকার ঐতিহ্য মোগল আমল থেকে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন শুরু হয়েছে পাকিস্তান আমলের শেষ দিক থেকে। এ সময় রেস্তোরাঁয় খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়। এরপর বাংলাদেশের জন্মের অনেক পরে শুরু হয় হোটেলে বসে ইফতারের সুযোগ।’

বদলেছে ঈদের সাংস্কৃতিক আয়োজন

চকবাজারের ঈদ মেলার ঐতিহ্য শত বছরের। ঈদের দিন সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে মেলা। ঐতিহ্য রক্ষায় এখনো হয় বটে, লোকসমাগমও ঘটে, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই সে মেলার ওপর আর নির্ভরশীলতা নেই পুরান ঢাকার মানুষের। ক্বাসিদা গেয়ে বা সাহ্‌রিতে রোজদারকে ডেকে জাগানোর সেই রীতি নেই। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ক্বাসিদার প্রতিযোগিতার আয়োজন স্তিমিত হয়ে আসছিল পঞ্চায়েত প্রথার শেষকাল থেকে। অবশেষে গত শতকের আশি, নব্বইয়ের দশকে শেষ হয়েছে ক্বাসিদা গায়কদের প্রতিযোগিতার আসর। পরিতোষ সেনের জিন্দাবাহার লেনের খলিফার জায়গা নিয়েছে বিভিন্ন নামীদামি ফ্যাশন হাউস। আর ঈদ–উৎসব উপলক্ষে কাওয়ালি গানের আসরের বদলে এখন শোনা যায় পুরান ঢাকার মহল্লায় মহল্লায় উচ্চ স্বরে বেজে চলেছে সাউন্ড বক্সে আধুনিক হিন্দি জনপ্রিয় গান।

নাজির হোসেন তাঁর ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ বইতে লিখেছিলেন, ‘উত্থান-পতন ঘটলেও যে সকল প্রাচীন শহর, পুরোনো গ্রাম বা মহল্লা বহুদিন পর্যন্ত স্ব স্ব ঐতিহ্যবাহী নাম বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে, এর মধ্যে ঢাকা শহর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’ সেই ঐতিহ্য কতখানি আছে বা কেন বদলে যাচ্ছে, এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাণিজ্যিক কাঠামো রূপ পাওয়ার ফলে বদলে গেছে ঈদের সংস্কৃতিও। একসময় ঈদ–উৎসব ছিল মহল্লাকেন্দ্রিক।

পুরান ঢাকায় একসময় ভোরে কাসিদা গাইতেন মানুষ। এখন হারিয়েছে সে প্রথা
প্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গুরুত্ব পেয়েছে তখন উৎসবকে কেন্দ্র করে। এখন পরিবারগুলো ছোট হয়ে যাচ্ছে। সত্তরের দশক থেকে বদলেছে ইসলামপুর, চকবাজারের চেহারা। পুরান ঢাকার বিত্তবানেরা তাঁদের বসবাসের জায়গা পরিবর্তন করে চলে এসেছেন ধানমন্ডি, গুলশান, বনানীর দিকে। ঢাকা বর্ধিত হয়েছে এর চারপাশে। ফলে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে পুরান ঢাকা থেকে মুঘল ঐতিহ্য। ’
তবে বর্ধিত নতুন ঢাকার জন্মও পুরান ঢাকার ইতিহাসের স্মৃতির গাঁথুনি নিয়েই। সেসব স্মৃতি পুরান ঢাকার আদি বাসিন্দাদের তাড়িত করে রোজার মাসে, ঈদ–উৎসবে।