সামাজিক ন্যায়বিচারে ঘাটতি দেখা দিলে তরুণ প্রজন্মকেই তা পূরণ করতে হবে

মুক্তির উৎসবে শিল্পীদের পরিবেশনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ২ ফেব্রুয়ারিছবি: দীপু মালাকার

দেশের সবাই সমঅধিকারের ভিত্তিতে বেঁচে থাকবে। প্রত্যেকের মানবিক মর্যাদা থাকবে। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। এমন স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু এখন মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্র–সমাজের কোথাও মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ঘাটতি দেখা দিলে, তা তরুণ প্রজন্মকেই পূরণ করতে হবে।

আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ‘মুক্তির উৎসব ২০২৪’-এ এসব কথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পী ও সাহিত্যিকেরা।

‘আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করব’ প্রতিপাদ্যে মুক্তির উৎসবের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, শিল্পী, সাহিত্যিক ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।

উৎসবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা এমন একটি সমাজ ও রাষ্ট্র চেয়েছিলেন, যেখানে সব নাগরিক সমঅধিকারের ভিত্তিতে বেঁচে থাকবে। প্রত্যেকের মানবিক মর্যাদা থাকবে। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সারওয়ার আলী বলেন, ‘এই মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ব্যাপারে যদি কোনো ঘাটতি সমাজ বা রাষ্ট্রে হয়, এই ঘাটতি তোমরা পূরণ করবে। তোমাদের মধ্যে নানা ধরনের মানুষ আছে। তোমাদের মধ্যে ধনী-গরিব মানুষ আছে। তোমাদের মধ্যে যেমন সুস্থ-সবল মানুষ আছে, তেমনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, নানা ধরনের মানুষ আছে। সবাই যেন সমমর্যাদা পান। সামাজিক ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়। এমন একটি দেশ ও সমাজ তোমরা গড়বে।’

শুভেচ্ছা বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষাবিদ ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের দেশকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। কারণ কী, তা জানো? ছেলে ও মেয়েরা সমান সমান আছে সব জায়গাতে।’

মুক্তির উৎসবে শিক্ষার্থীদের শপথ পড়ানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ২ ফেব্রুয়ারি
ছবি: দীপু মালাকার

জাফর ইকবাল বলেন, পৃথিবীতে এমন দেশ আছে, যেখানে মেয়েরা লেখাপড়া করতে চেয়েছিল বলে জঙ্গিরা এসে মাথায় গুলি করে দিয়েছে।জাফর ইকবাল বলেন, রক্ত যদি স্বাধীনতার মূল্য হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মূল্য দিয়ে কেউ স্বাধীনতা কেনেনি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা মুক্তিযুদ্ধ হয়তো আর করতে পারবে না। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধারা যেটা করতে চেয়েছিলেন, সেটা তো করতে পারবে। তাঁরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন যদি তোমরা পূরণ করো, সেটাও হবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখানো।’

এ দেশ সবার বলে উল্লেখ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকের। তিনি বলেন, ‘আমাদের উচিত সবাইকে সম্মান করা। সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করা।’

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শপথ পাঠ করান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম ও আশালতা বৈদ্য। শপথ পাঠ শেষে শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার আহ্বান জানান জাফর ইমাম। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধকে না জানি, তাহলে এর চেতনাকে বহমান রাখতে পারব না। এখন আমাদের জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিরাট ঘাটতি। আমরা আজকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করি। কারণ, এর চর্চা নেই, গবেষণা নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হলে এর সঠিক ইতিহাস জানতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেশ, মানুষ ও স্বাধীনতাকে ভালোবাসার আহ্বান জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) রফিকুল ইসলাম। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই উৎসবে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল।