সরকার চাইলে ঘটবে না, সরকার না চাইলে ঘটবে: দুর্গাপূজায় হামলা প্রসঙ্গে রানা দাশগুপ্ত

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্য মোর্চার সংবাদ সম্মেলন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ১ অক্টোবর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত দুর্গাপূজার নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সরকার চাইলে ঘটবে না, সরকার না চাইলে ঘটবে।

আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে করা এক প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ৪ নভেম্বর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সরকারি দল আওয়ামী লীগের সংখ্যালঘুবান্ধব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্য মোর্চা এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

রানা দাশগুপ্তর কাছে প্রশ্ন করা হয়, তিন মাস পর নির্বাচন এবং এর আগে দুর্গাপূজা। পূজার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনা কী এবং কোথাও কোনো হামলা হয়েছে কি না? জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘পূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালায়ে বৈঠক হয়েছিল। সেখানে বলেছি, ২০২২ সালে শারদীয় দুর্গাপূজায় কোনো ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটেছিল, তা ২০২১ সালে।

অর্থাৎ সরকার চাইলে ঘটবে না, সরকার না চাইলে ঘটবে—এটা এখনকার বাংলাদেশের বাস্তবতা। প্রশাসন, সব রাজনৈতিক শক্তি যেন এক জোট হয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের স্বার্থে রুখে দাঁড়ায়। পূজা  চলার সময়ে সবার ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা দেখতে চাই। যাতে কোনো গন্ডগোল না হয়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে। যদিও ইতিমধ্যে মূর্তি ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গেছে।’

২০২১ সালে কুমিল্লা জেলার এক মণ্ডপে হামলার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এক জায়গায় ধরা পড়ল আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলল, লোকটা পাগল। এই পাগলের পেছনের চক্রান্তকারীদের আজও গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করলে এ ঘটনা ঘটত না।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ঐক্য মোর্চার প্রধান সমন্বয়ক রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পরাশক্তিগুলোর কূটনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় এ দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। কোনো কোনো সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে মদদদান ও পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁরা শঙ্কিত।

আরও পড়ুন

সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দেওয়া প্রতিশ্রুতি আদায়ে নিজেদের চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে রানা দাশগুপ্ত বলেন, বর্তমান সরকারি দল ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বেশ কয়েকটি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুর স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ২০২১ সালেও সেসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করেনি। তাই ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও এর নেতৃত্বাধীন ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্য মোর্চা সংখ্যালঘুর স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। রানা দাশগুপ্ত জানান, আগামী ৪ নভেম্বর বেলা দুইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ হবে। এ ছাড়া ৬ অক্টোবর বিকেল চারটায় সারা দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে বিকেল চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে।

আরও পড়ুন

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদের মিলন কান্তি দত্ত, মণীন্দ্র কুমার নাথ, পলাশ কান্তি দে, রঞ্জন কর্মকার প্রমুখ।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে এ কর্মসূচি ৩৪ ঘণ্টা চলার পর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান। তিনি অক্টোবর মাসের মধ্যেই জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার আশ্বাস দিলে অনশন কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।