‘সৌজন্য ভাড়া’ হিসাবে মাসিক ১ হাজার টাকা অযৌক্তিক নয়: তদন্ত কমিটি

ফাইল ছবি

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) উত্তরা মেট্রোরেল ডিপোতে অবস্থিত ৭ হাজার ৫৮০ বর্গফুট আয়তনের স্টাফ ক্যানটিন পরিচালনার জন্য ‘সৌজন্য ভাড়া’ হিসাবে মাসিক এক হাজার টাকা নির্ধারণ অযৌক্তিক বলা যায় না। ক্যানটিনটি এক হাজার টাকা ভাড়ায় পরিচালনার জন্য চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মতামত অংশে এমন তথ্য এসেছে।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ সোমবার এ–সংক্রান্ত রিটটি শুনানির জন্য ওঠে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এসেছে বলে আদালতকে জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের আইনজীবী। আদালত প্রতিবেদনটি হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলে আগামী বুধবার শুনানির জন্য দিন রেখেছেন।

এর আগে ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (স্টোর ও প্রকিউরমেন্ট) মো. নজরুল ইসলামের গত ১৪ মার্চ সই করা একটি স্মারকে ক্যানটিন পরিচালনার জন্য চুক্তি সম্পাদনে খন্দকার এন্টারপ্রাইজ বরাবরে নোটিশ দেওয়া হয়। এই নোটিশের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২১ মার্চ রুলসহ আদেশ দেন।

আদেশে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) উত্তরা মেট্রোরেল ডিপোতে অবস্থিত ৭ হাজার ৫৮০ বর্গফুটের স্টাফ ক্যানটিন মাসিক এক হাজার টাকা ভাড়ায় পরিচালনার জন্য চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে অনুসন্ধান করে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ২ জুন বিষয়টি উঠলে সেদিন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের আইনজীবী দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের তথ্য জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময়ের আরজি জানান। আদালত এক সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে।

আদালতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী। রিটের পক্ষে ছিলেন আবেদনকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

পরে আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হলে আদালত তা হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলেন। শুনানির জন্য বুধবার দিন রেখেছেন।

অযৌক্তিক বলা যায় না

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম শামীম আক্তারকে আহ্বায়ক করে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এমআরটি অধিশাখার যুগ্ম সচিব নাজনীন ওয়ারেস।

তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশের ভাষ্য, নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীদের জন্য এই ক্যানটিন ডিএমটিসিএলের এমআরটি-৬–এর উত্তরা ডিপোর কেপিআইভুক্ত প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এলাকায় অবস্থিত। দরপত্রে উল্লেখিত খাবারের পরিমাণ ও দাম মেনেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হবে। যেহেতু এটি অবাণিজ্যিক প্রকৃতির, সেহেতু ‘সৌজন্য ভাড়া’ হিসাবে মাসিক এক হাজার টাকা হারে এক বছরের জন্য (ভ্যাট ও আয়কর ছাড়া) সর্বমোট ১২ হাজার টাকা মূল্যে ভাড়া নির্ধারণসংক্রান্ত কাজ পাওয়ার বিষয়টি (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) সার্বিক প্রেক্ষাপট ও একই ধরনের অন্যান্য ক্যানটিনের ভাড়া মূল্য বিবেচনায় অযৌক্তিক বলা যায় না। যেহেতু ক্যানটিনটি প্রথমবারের মতো চালু হবে, তাই এটির কার্যক্ষমতা দুই থেকে তিন বছরের আগে বোঝার সুযোগ নেই।

প্রতিবেদনের শেষাংশে বলা হয়, স্টাফ ক্যানটিনটি পরিচালনার জন্য গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আহ্বান করা হয়। ছয়টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও জমাপ্রদানকারী চারটি প্রতিষ্ঠানই কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক নন-রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। তাই মূল্যায়ন কমিটি দরপত্রের শর্ত শিথিল করে পুনঃ দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়, যা ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। পরে পুনঃ দরপত্রের মাধ্যমে খন্দকার এন্টারপ্রাইজ কারিগরি মূল্যায়নে রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। এরপর দর–কষাকষি করে খাবারের পরিমাণ অনুযায়ী খাদ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয় এবং তার অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। প্রক্রিয়াগতভাবেও এটি যথাযথ প্রতীয়মান।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভাষ্য, উত্তরা ডিপো কেপিআইভুক্ত বলে ডিপোতে শুধুমাত্র পরিচয়ধারী কর্মচারীরাই প্রবেশ করতে পারেন। বহিরাগতদের ডিপোতে প্রবেশাধিকার নেই। এই স্টাফ ক্যানটিন পরিচালনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিএমটিসিএলের নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীদের সাশ্রয়ীমূল্যে স্বাস্থ্য সম্মত, পুষ্টিকর এবং উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা। প্রতিদিন গড়ে কর্মরত অর্ধেক স্টাফ এখান থেকে খাবার গ্রহণ করবেন, এটি বিবেচনায় রাখায় স্টাফ ক্যানটিনটি পরিচালনার বাণিজ্যিক পরিধি অত্যন্ত সীমিত।