মশার কয়েল ও বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই আগুন, বলছে ফায়ার সার্ভিস

৪ এপ্রিল ভোরে রাজধানীর বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুন লাগে।
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে জ্বলন্ত সিগারেট অথবা মশার কয়েলের কথা বলেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটি। ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণও প্রায় একই রকমের। তারা বলছে, মশার কয়েলের আগুন বা বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত।

অন্যদিকে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের একমাত্র কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ (শর্টসার্কিট)—এ বিষয়ে নিশ্চিত ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার ও নিয়মিত তদারকি না করায় বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বলে তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে তারা।

আরও পড়ুন
১৫ এপ্রিল ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ২২৬টি দোকান পুড়ে গেছে।
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন ৮ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। এর মধ্যে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুটি বিষয় পাওয়া গেছে। মশার কয়েল থেকে আগুন ছড়িয়েছে অথবা বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে দুটি বিষয়ই উল্লেখ থাকবে। আর ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ।

গত ৪ এপ্রিল ভোরে রাজধানীর বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুন লাগে। পাশাপাশি লাগোয়া চারটি বিপণিবিতানের সমন্বিত নাম বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স। সেদিন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের পাশাপাশি আরও চারটি মার্কেট (বিপণিবিতানে) আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গত ১১ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তারা বলেছে, মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি এমব্রয়ডারি টেইলার্স থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। সিগারেটের আগুন অথবা মশার কয়েলের আগুন থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ২২৬টি দোকান পুড়ে গেছে। মার্কেটের মালিক সমিতি বলছে, আগুনে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দুটি মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও মার্কেটের বৈদ্যুতিক মিস্ত্রিদের সাক্ষাৎকার নিতে সময় লেগেছে। অনেকেই কথা বলতে রাজি হননি। এসব কারণে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে সময় বেশি লেগেছে।

ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেট অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ছিল। দুটি মার্কেটের মালিক সমিতিকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠিও দিয়েছিল তারা। ফায়ার সার্ভিস বলছে, ঢাকার বেশির ভাগ মার্কেট অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রাজধানীর ৫৮টি বিপণিবিতান পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সব কটিই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি বিপণিবিতান অগ্নিকাণ্ডের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৪৯টির মধ্যে ৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৪টি মাঝারি মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ।

শতাধিক জিডি

ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত শতাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। পুলিশ বলছে, আগুনের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এসে জিডি করছেন। ব্যবসায়ীরা মূলত ইনস্যুরেন্সের (বিমা) টাকা ফেরত পেতে এসব জিডি করছেন।

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল গণি প্রথম আলোকে বলেন, আগুনের ঘটনায় কারও অবহেলা রয়েছে কি না, সেটা জানতে পুলিশ বিভিন্ন সংস্থার মতামত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। সংস্থাগুলো থেকে এখনো মতামত পাওয়া যায়নি।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেটে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোর মধ্যে কয়েকটি সংস্কার করা হয়েছে। আবার কিছু দোকানে সংস্কারকাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত চারজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেন, আগামী ঈদের আগে দোকানের সংস্কারকাজ শেষ করে আবার ব্যবসা শুরু চেষ্টা থাকবে।