এবারও দুর্গাপূজায় হামলার আশঙ্কা করছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা
হিন্দু সম্প্রদায়ের তিনটি সংগঠনের পৃথক সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে দেশের বেশ কিছু জেলায় মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখনো বিভিন্ন জায়গায় মন্দির-পূজামণ্ডপে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে না। ফলে এবারের দুর্গাপূজায়ও ২০২১ সালের মতো সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটতে পারে। তাই যে রাজনৈতিক দল নিরাপত্তা দেবে, তাদেরই ভোট দেবে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে এসব কথা বলেছেন তিনটি সংগঠনের নেতারা। সমাবেশ পৃথক হলেও তিনটি সমাবেশ ডাকার উদ্দেশ্য প্রায় অভিন্ন। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু নির্যাতন, প্রতিমা ভাঙচুর, পূজায় তিন দিনের সরকারি ছুটি, নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করাসহ বিভিন্ন দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
আসন্ন দুর্গাপূজায় দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদ, দুর্গাপূজায় তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা এবং প্রতিটি মন্দিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
সেখানে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে বলেন, ‘বিভিন্ন মন্দিরে আমরা খবর নিয়ে দেখেছি, তারা বিভিন্নভাবে নিরাপত্তাহীনতায় আছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় পূজা মন্দিরে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। পূজার মূর্তি ভাঙার আশঙ্কা বোধ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তার কোনো সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম লক্ষ করিনি। তার মানে, এবারও ২০২১ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।’
কুমিল্লার সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব ইতিমধ্যে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন পলাশ কান্তি দে। সরকারের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিচ্ছেন অভিযোগ করে পলাশ কান্তি দে বলেন, এই দুজন ব্যক্তিকে (বাহাউদ্দিন বাহার ও ফয়সাল বিপ্লব) অনতিবিলম্বে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত যে পূজার ঠিক আগে তারা কেন এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। ২০২১ সালে পূজার আগেও বিভিন্ন পক্ষ এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল।
সাম্প্রদায়িক শক্তি পঞ্জিকা দেখে হিন্দু সম্প্রদায়ের কখন পূজা ও উৎসব আছে, সেটা লক্ষ করে হামলা করছে অভিযোগ করে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র বলেন, ‘বারবার সরকারকে বলেছি, এরা কারা, চিহ্নিত করুন। কিন্তু সরকার তাতে ব্যর্থ হয়েছে। চিহ্নিত করলে থলের কালো বিড়াল বের হয়ে যাবে, সরকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সাম্প্রদায়িক শক্তির উন্মোচন হবে? দু-একজন সাম্প্রদায়িক শক্তির জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।’
‘যারা হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবে, তাদেরকেই ভোট দেব’
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের পাশেই দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু নির্যাতন, প্রতিমা ভাঙচুরকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ।
হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাজন কুমার মিশ্র বলেন, ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন না করা হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেব না। আমরা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে যারা নিরাপত্তা দেবে, তাদেরকেই আমরা ভোট দেব; সে হোক আওয়ামী লীগ, হোক বিএনপি, হোক জাতীয় পার্টি। আমাদের কাছ থেকে ভোট নেবেন, নিরাপত্তা দেবেন না, আমাদের সম্পদ দখল করবেন, সেই দিন এখন আর নেই।’
দুর্গাপূজায় ৩ দিনের ছুটি দাবি
হিন্দু মহাজোট ও হিন্দু পরিষদের পাশে জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম। তারা দুর্গাপূজায় তিন দিন এবং রথযাত্রায় এক দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু নির্যাতন, প্রতিমা ভাঙচুর, কবির রাধাপদ রায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে তারা।
লিখিত বক্তব্যে জাতীয় হিন্দু ফোরামের সভাপতি মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, ‘একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র নির্মাণ এবং সবার সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। অথচ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় আজও তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।’
জাতীয় হিন্দু ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মানিক চন্দ্র সরকার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুর্গাপূজায় তিন দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানিয়ে আসছি। পরিতাপের বিষয়, আজ পর্যন্ত এর কোনো উত্তর মেলেনি।’