ঢাকায় মধ্যরাতে ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করতে গিয়ে গাড়িচাপায় মৃত্যু

গাড়িচাপায় নিহত তাজুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সিঙ্গাপুর যাবেন। এ জন্য তাঁকে বিদায় জানাতে তাঁর ঢাকার বারিধারার বাসায় গিয়েছিলেন মানিকগঞ্জ সদরের পৌর কাউন্সিলর আরশেদ আলী বিশ্বাসসহ পাঁচজন। সেখান থেকে ফেরার পথে তাঁদের গাড়ি মোহাম্মদপুরের আসাদ গেট এলাকায় আসার পর এক ছিনতাইকারী কাউন্সিলর আরশেদের মুঠোফোন ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। এ সময় তাঁর ভাগনে তাজুল ইসলাম গাড়ি থেকে নেমে ছিনতাইকারীর পেছনে ছোটেন। পরে একটি গাড়ির চাপায় ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে। ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা এলাকায়। আর যে স্থানে তাজুল নিহত হয়েছেন, সেটি পড়েছে শেরেবাংলা নগর থানার মধ্যে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে। আর শেরেবাংলা নগর থানায় পৃথক মামলা হয়েছে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে। দুটি মামলারই বাদী মানিকগঞ্জ সদরের পৌর কাউন্সিলর আরশেদ আলী বিশ্বাস।

পুলিশের মোহাম্মদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে কয়েকজন একটি কাজে গাড়িতে ঢাকায় এসেছিলেন। কাজ শেষে তাঁরা মানিকগঞ্জে ফিরছিলেন। আসাদ গেট পার হয়ে কোনো কারণে তাঁরা গাড়িটি থামান। গাড়ির গ্লাস (জানালা) খোলা ছিল। এ সময় এক ছিনতাইকারী তাঁদের একজনের মুঠোফোন ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। তখন তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে ছিনতাইকারীর খোঁজ করছিলেন। খুঁজতে খুঁজতে তাঁদের একজন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে চলে আসেন। এ সময় একটি গাড়ির চাপায় তাজুল নিহত হন।

কাউন্সিলর আরশেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, নিহত তাজুল তাঁর দূর সম্পর্কের ভাগনে। স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশযাত্রা উপলক্ষে তাঁর সঙ্গে তাঁরা দেখা করতে এসেছিলেন। মানিকগঞ্জে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটল।

তাজুল মানিকগঞ্জ সদরের মালঞ্চ গ্রামের তেজুর উদ্দিনের ছেলে। তাজুল স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গ্রামে থাকতেন। তাঁর ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে ও মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জ-৩ (সদরের একাংশ ও সাটুরিয়া উপজেলা)।

কাউন্সিলর আরশেদের সঙ্গে ওই গাড়িতে ছিলেন আবদুল মালেক নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী ও তাজুলের বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, কাউন্সিলর আরশেদের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার পর তাজুল গাড়ি থেকে নেমে ছিনতাইকারীর পেছনে ছুটতে থাকেন। পরে তিনিও তাজুলের পেছনে ছোটেন। একপর্যায়ে তাজুলকে আর তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন না। পরে আড়ংয়ের উল্টো পাশে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে দেখতে পান তাজুল রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। দ্রুত তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আবদুল মালেক জানান, ময়নাতদন্ত শেষে আজ দুপুরে তাজুলের মরদেহ পুলিশ তাঁদের কাছে হস্তান্তর করেছে।

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার স্থানটি শেরেবাংলা নগরে পড়ার কারণে দুর্ঘটনার মামলা এ থানায় নেওয়া হয়েছে। তাজুলকে চাপা দেওয়া গাড়িটি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

ছিনতাই থেমে নেই

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, যেখানে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছে, সেখান থেকে কয়েক শ গজ দূরেই ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার পাশেই রয়েছে পুলিশের ট্রাফিক বক্স। এ এলাকায় প্রায়ই এ ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে এ ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ চুরির মামলা নিচ্ছে। গতকালের ঘটনাতেও চুরির মামলা নেওয়া হয়েছে। ফলে ঘটনার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। চুরির মামলা নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মনিটরিং সেলে আলোচনা হয় না। ফলে এ ধরনের ঘটনাগুলোর তদন্তে এবং এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর অনলাইনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার অপরাধের চিত্র নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘তেজগাঁও রাজধানীর সবচেয়ে বেশি অপরাধপ্রবণ এলাকা, কম রমনা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, তেজগাঁও বিভাগে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদকের কারবার সবচেয়ে বেশি। মোহাম্মদপুরের বছিলা ও বেড়িবাঁধ এলাকা এবং আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় বস্তি রয়েছে। সেখানে ভাসমান ও নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। এদের একটি বড় অংশ অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। গত সাড়ে তিন বছরে তেজগাঁও বিভাগে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৬১টি চুরির (সিঁধেল ও গাড়ি চুরিসহ) মামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ২৬০টি ছিনতাই, ২০টি ডাকাতি ও ৩৮টি অপহরণের মামলা হয়েছে এখানে। পুলিশের হিসাবে সর্বাধিক ৮ হাজার ৪০৫টি মাদকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে তেজগাঁও বিভাগে।