ঢাকার ব্যস্ত সড়কে সরকারি খরচে সচিবের ছবি

বিজয় সরণি মোড়ে বিশাল ক্যানভাসে শোভা পাচ্ছে সচিব নাহিদ রশীদের ছবি
প্রথম আলো

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা বিজয় সরণি মোড়ের বিমান ভাস্কর্যের উত্তরে বেশ কিছু খেজুরগাছ। এগুলোর গা ঘেঁষে কাঠের ফ্রেমে তৈরি বড় একটি ক্যানভাস। তাতে এক নারীর ছবি। মনে হতে পারে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবি এটি। কিন্তু না, এটি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশীদের।

জনগণের অর্থে এভাবে সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা একজন কর্মচারীর নিজের প্রচার চালানো নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা।

শনিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র–সংলগ্ন মাঠে দুদিনব্যাপী শুরু হয়েছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী ২০২৩। এটি উদ্বোধন করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। জানা গেছে, প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের সচিব নিজের এমন প্রচার চালাচ্ছেন।

কেবল বিজয় সরণি মোড় নয়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মূল ফটকের কাছেও পৃথক দুটি ক্যানভাসের এক পাশে প্রধানমন্ত্রীর, অন্য পাশে সচিব নাহিদ রশীদের ছবি শোভা পাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রদর্শনীর মূল ফটকের ডান পাশেও রয়েছে সচিবের ছবি।

কেবল বিজয় সরণি মোড় নয়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মূল ফটকের কাছেও পৃথক দুটি ক্যানভাসের এক পাশে প্রধানমন্ত্রীর, অন্য পাশে সচিব নাহিদ রশীদের ছবি শোভা পাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রদর্শনীর মূল ফটকের ডান পাশেও রয়েছে সচিবের ছবি।

প্রদর্শনীর দুদিনের এ আয়োজনে এত বড় করে রাস্তার ধারে আপনার ছবি ছাপানোর দরকার ছিল কি না—জানতে চাইলে নাহিদ রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়া বাকিদের (সরকারি কর্মচারী) কিছু আসবে, এটা জানতাম। বেশি হতে পারে অথবা কম হতে পারে, কিছু তো আসবেই।’

এটা দুর্ভাগ্যজনক। এগুলো হওয়া উচিত নয়। সরকারি অর্থে সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কর্মকর্তারা দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তাঁদের একটু ভালো বিবেচনা শক্তি ব্যবহার করা উচিত।
বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)

তবে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী সরকারি খরচে এভাবে নিজের প্রচার চালাতে পারেন কি না, সেই বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। এগুলো হওয়া উচিত নয়। সরকারি অর্থে সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কর্মকর্তারা দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তাঁদের একটু ভালো বিবেচনা শক্তি ব্যবহার করা উচিত।’

সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠের প্রদর্শনী কেন্দ্র থেকে নভোথিয়েটার সংলগ্ন বিজয় সরণি মোড় পর্যন্ত কাঠের ফ্রেমে ক্যানভাস করে এ আয়োজনের প্রচার করা হয়েছে। ক্যানভাসগুলোতে জাতির পিতা, প্রধানমন্ত্রী, প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর পাশাপাশি স্থান পেয়েছে সচিবের ছবি।

জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর এ আয়োজনের প্রচারের খরচ বহন করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)। ক্যানভাসে প্রচার চালানোর পাশাপাশি গণমাধ্যমেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে এ আয়োজনের।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুদিনের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর এ আয়োজনে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ শতাংশের মতো অর্থ। এ নিয়ে কথা বলতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. এমদাদুল হক তালুকদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর এ আয়োজন করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ), বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি), প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) ও প্রাণিসম্পদ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীন এলডিডিপি প্রকল্প একটা খরচ বহন করছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, সিটি ব্র্যান্ডিং, মেলা প্রাঙ্গণ ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে প্রকল্পের আওতায়। বাকি অর্থ ওষুধ কোম্পানি, বীজ কোম্পানি, অংশীজনরা দিচ্ছেন। এ আয়োজনে সরকার দিচ্ছে ২০ ভাগ, বেসরকারি খাত ৮০ ভাগ।’

এলডিডিপির চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর মো. গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আয়োজনের অর্থায়ন বেসরকারি খাতের। এলডিডিপি শুধু এখানে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট দেবে। আমরা প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছি। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন গেছে। সিটি ব্র্যান্ডিং করেছি।’ তবে এলডিডিপি কত খরচ করছে, তা জানাননি তিনি।

এদিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের আরশিনগর থেকে দুটি ষাঁড় ও একটি মহিষ প্রদর্শনীতে এনেছে রাবিবা অ্যাগ্রো। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার এম এ মাকসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলায় আনা ও তা দেখভালের জন্য লোকবল রাখাসহ সব খরচ নিজের। প্রদর্শনীর আয়োজক কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছু দিচ্ছে না, আমরাও তাদের কিছু দিচ্ছি না।’

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের মধ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। সেসবের পুরো অর্থের জোগান এলডিডিপি দেবে বলে জানা গেছে।