এক ছাদের নিচে রংবেরঙের পাখি, কুকুর আর লোমশ গরু

বিভিন্ন জাতের পাখি প্রদর্শন করা হয় মেলায়ছবি: প্রথম আলো

মাঠে বানানো হয়েছে বিশালাকার অস্থায়ী প্যাভিলিয়ন। দূর থেকে শোনা যায় কিচিরমিচির শব্দ, যেন রঙিন প্রাণিজগৎ ডাকছে কাছে। প্যাভিলিয়নের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে সারি সারি স্টল। কোথাও রঙিন পালকের শৌখিন পাখি, কোথাও নানা প্রজাতির কুকুর, আবার কোথাও সযত্নে সাজানো পোষা বিড়াল। দর্শনার্থীরা স্টলের সামনে দাঁড়াচ্ছেন, ছবি তুলছেন। কেউ কেউ আবার হাত বুলিয়ে আদর করছেন প্রাণীগুলোকে। প্যাভিলিয়নজুড়ে এ এক উৎসবমুখর পরিবেশ।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে গিয়ে এমন প্রাণবন্ত দৃশ্য দেখা গেছে। জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনী চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।

প্রদর্শনীতে মাঠের এক পাশে ছিল চার নম্বরের বিশাল প্যাভিলিয়ন, যা পুরোপুরি সাজানো হয়েছে পোষা প্রাণী ও শৌখিন পাখি নিয়ে। পাখিদের একটি স্টলে কথা হয় বার্ড হাউস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মোর্শেদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, বেশ কয়েকটি দুষ্প্রাপ্য ও রঙিন পোষা পাখি প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। সবচেয়ে নজর কাড়ছে প্রাইটন কাকাতুয়া। এটি অস্ট্রেলিয়ার বিরল প্রজাতি। পাঁচ বছর দুই মাস বয়সের ওই পাখির দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা। প্রাইটন কাকাতুয়া সম্পর্কে মোর্শেদ বলেন, ‘এ পাখির শান্ত স্বভাব, মানুষের সঙ্গে দ্রুত মিশে যাওয়া ও তার মসৃণ সাদা-হলদে পালক দর্শনার্থীর চোখ আটকে দেয়।’

দীর্ঘ লোম আর ভারী মাথার বাদামি রঙের সুইজারল্যান্ডের সেন্ট বার্নাড কুকুর। ঢাকা, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫
ছবি: প্রথম আলো

পাশেই আইকনিক বাংলা ক্যানেল অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্টল। এ স্টলে আছে নানান বিদেশি প্রজাতির কুকুর। আকারে বিশাল, দীর্ঘ লোম আর ভারী মাথার বাদামি রঙের সুইজারল্যান্ডের সেন্ট বার্নাড কুকুর ছিল ওই স্টলে। কুকুরটি প্রথম দেখায় অনেকেই ভয় পাচ্ছিলেন। তবে সঙ্গে থাকা সহযোগী জানাচ্ছিলেন, কুকুরটি খুবই কোমল ও শিশুপ্রিয়।

এর সঙ্গেই রাখা ছিল জার্মানির প্রজাতির গ্রেড ড্যাম কুকুর। এটির লম্বা পা, সুউচ্চ দেহ আর গম্ভীর চাহনিতে কুকুরটি দেখতে রাজকীয় ও ভীতিকর। তবে কুকুরটি স্বভাবে অত্যন্ত শান্ত, বন্ধুত্ব করতে ভালোবাসে। সহযোগীর কোলে বারবার উঠে যাচ্ছিল কুকুরটি।

দর্শনার্থীরা কুকুর দুটির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন, হাত দিয়ে আদর করছিলেন। ওই দুটি কুকুর ছাড়াও স্টলটিতে চওড়া মুখ, ভাঁজ পড়া গাল আর ভারী গড়ন বুলডগ, গোলগাল ও চকচকে হাসির মতো মুখের ল্যাব্রাডর কুকুর ছিল। ওই স্টলের প্রতিনিধি ইমরান হাসান বলেন, সেন্ট বার্নাড প্রজাতির কুকুরের নাম রাখা হয়েছে মেরন, দাম এক লাখ টাকা। আর গ্রেড ড্যাম কুকুরটির মূল্য ৮০ হাজার টাকা।

মেলায় আনা হয় ম্যাকাও পাখি। ঢাকা, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫
ছবি: প্রথম আলো

প্রদর্শনীর একটি স্টলে চারটি ময়ূর রাখা হয়েছে। ময়ূরগুলো এনেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শওকত আলী অ্যাগ্রোর বায়োজিদ খন্দকার। তিনি বলেন, চারটির মধ্যে দুটি ব্রোঞ্জ-লেজযুক্ত ময়ূর, আর দুটি রয়েছে সিলভার পাইড ময়ূর। এ ময়ূর বছরে একবার ৮-৯টি ডিম দেয়। সেখান থেকে ৬-৭টি ময়ূরছানা পাওয়া যায়। দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্রোঞ্জ-লেজযুক্ত ময়ূর দুটির মূল্য সাড়ে তিন লাখ টাকা। আর সিলভার পাইট দুটির দাম সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা।

ওই প্যাভিলিয়নের পাশেই দেশীয় জাতের গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির নির্ধারিত হল। হলটিতে নানান প্রজাতির ছোট-বড় গরু থাকলেও হাঁস-মুরগি চোখে পড়ল না। ভেতরে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে ফালাক ক্যাটেল অ্যাগ্রোর স্টল। সেখানে নেপালি ভুট্টি ও শাহিওয়াল গরু রয়েছে। প্রায় তিন ফুট উচ্চতার কালো রঙের ভুট্টিটি গাভি, বয়স তিন বছর। ভুট্টি গরুটি শুধু প্রদর্শনীর জন্য বলে জানালেন বিক্রেতা। এর বাইরে থাকা লাল শাহিওয়ালের দাম ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আর সাদা শাহিওয়ালটির দাম পৌনে ৩ লাখ টাকা বলে জানান তিনি।

ওই হলে আরও কিছু অ্যাগ্রো ফার্ম ও খামারির স্টল রয়েছে। ওই সব স্টলে মীরকাদিম, হলস্টেইন, ফিজিয়ান, নর্থ বেঙ্গলসহ আরও বেশ কিছু দেশি গরু রয়েছে।

পাখি হাতে নিয়ে দর্শনার্থীদের দেখানো হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

এরপরই রয়েছে শংকর জাতের গাভির হল। ভেতরে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে নজর কাড়বে লোমশ একটি গরু। গরুটি এনেছেন মাগুরা অ্যাগ্রিকালচার লিমিটেড। ফ্ল্যাগ-বি জাতের গরুটির বয়স ৯ মাস বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানের মালিক মোস্তফা আক্তার। তিনি বলেন, গরুটি দেখতে সুন্দর হয়। নাভি-কম্বল সুন্দর হয়। যখন চার-পাঁচ দাঁতের প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন এর ওজন ১ হাজার ২০০ কেজির মতো হয়। গরুটি মূলত মাংসের জন্য। এর মাংসে চর্বি কম থাকে। তাঁর স্টলে ব্রাহমা ক্রস ও লাল শাহিওয়াল গরুও রয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রাণিসম্পদের প্রদর্শনী ছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন দপ্তর ও আয়োজকদের স্টলও রয়েছে মেলায়। দর্শনার্থীদের জন্য প্রাণিসম্পদবিষয়ক নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে মেলার বিভিন্ন স্টলে।

কেউ কেউ আবার হাত বুলিয়ে আদর করেন প্রাণীগুলোকে
ছবি: প্রথম আলো

প্রদর্শনীতে গাভি ও ষাঁড় ছাড়াও ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ও গাড়ল রয়েছে। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে তিনটি দুম্বা ও একটি গাড়ল নিয়ে এসেছেন জি এ অ্যাগ্রোর মালিক জাকির হোসেন। এর মধ্যে দুম্বাগুলোর ওজন ৯০ থেকে ১০৫ কেজি। একেকটির দাম চাওয়া হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা। সঙ্গে এনেছেন একটি গাড়ল। যেটির দাম ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাইছেন জাকির।

প্রদর্শনীতে গরু দেখছিলেন ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম। ফার্মগেটের এই বাসিন্দা বলেন, প্রাণীর বৈচিত্র্য আর খামারির সঙ্গে সরাসরি আলাপ করতে পেরে ভালো লাগছে। পোষা প্রাণী ও পশু সম্পর্কেও অনেক ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।