ওপেন হাউস ডে: সাধারণ মানুষ কি কথা বলার সুযোগ পাবেন

প্রথম দিকে ওপেন হাউস ডে আয়োজনে সাধারণ মানুষ এলাকার সমস্যা তুলে ধরার সুযোগ পেলেও পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায় পুলিশ। করোনার কারণে তিন বছর বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হচ্ছে এই আয়োজন
ছবি: ডিএমপি নিউজের সৌজন্যে

রাজধানীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে থানায় থানায় ওপেন হাউস ডে বা উন্মুক্ত দিবসের আলোচনা সভা চালু হয়েছিল ২০০৭ সালে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নেওয়া এ উদ্যোগ তখন প্রশংসা পেয়েছিল। পরে দেশের অন্য থানাগুলোতেও এটি শুরু হয়।

তবে ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে ডিএমপির থানাগুলোয় ওপেন হাউস ডে আয়োজন বন্ধ রয়েছে। যদিও এই সময়টাতে দেশের কিছু থানায় অনিয়মিতভাবে এ সভার আয়োজন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাস থেকে ডিএমপির ৫০ থানায় আবারও এই ওপেন হাউস ডে চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা এতে অংশ নেবেন, নতুন করে তাঁদের নামের তালিকা তৈরিও শুরু হয়েছে।

শুরুটা যেভাবে

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ২০০৭ সালে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার নাইম আহমেদ ওপেন হাউস ডে চালু করেছিলেন। পরে সারা দেশের থানাগুলোতেও তা চালু করা হয়। ওপেন হাউস ডে চালুর অন্যতম লক্ষ্য ছিল, বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এলাকার মানুষের সঙ্গে পুলিশের এক হয়ে কাজ করা।

প্রতি মাসে একবার ওপেন হাউস ডের আয়োজন করা হতো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রথমদিকে এ সভায় অরাজনৈতিক ও অভিযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের ডাকা হতো। তখন সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগী এতে অংশ নিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদকের ব্যবহার ও বখাটেদের উৎপাতের প্রতিকার চাইতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একপর্যায়ে সব থানায় অংশগ্রহণকারীদের নতুন তালিকা করা হয়। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা প্রাধান্য পান। কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে ওপেন হাউস ডে। সভা হলেও সমস্যার সমাধান তেমন হতো না। পরে সভাও ঠিকমতো হতো না। করোনা মহামারি শুরু হলে ওপেন হাউস ডে আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়।

আবার উদ্যোগ

নতুন উদ্যোগের কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যাঁরা ওপেন হাউস ডের আলোচনায় অংশ নেবেন, নতুন করেন তাঁদের তালিকা করা হচ্ছে। অভিযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের ওপেন হাউস ডের তালিকায় রাখা হবে। প্রতি মাসে নির্ধারিত দিনে তাঁরা আলোচনায় অংশ নিয়ে এলাকার অপরাধ পরিস্থিতি তুলে ধরে ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে পুলিশকে সহযোগিতা করবেন।

ডিএমপির সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপকমিশনারের সভাপতিত্বে ওপেন হাউস ডেতে অংশ নেবেন অতিরিক্ত উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

ডিএমপি কর্মকর্তারা আশা করছেন, আবার ওপেন হাউস ডে চালু করা হলে উত্ত্যক্তের ঘটনা, কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ এবং মাদকের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খ. মহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার (খন্দকার গোলাম ফারুক) রাজধানীর ৫০ থানার ওসিদের নিয়ে বৈঠকে রাজধানীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে আবার ওপেন হাউস ডে চালুর সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুলাইয়ের শুরুতে ওপেন হাউস ডে চালু হবে। মাসে একবার প্রতিটি থানায় এ সভা হবে।