পুরোহিত হিসেবে পূজা পরিচালনা করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সরস্বতীপূজা পরিচালন করছেন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সমাদৃতা ভৌমিকছবি: প্রথম আলো

বিভাগে শিক্ষার্থীরাই প্রতিবছর সরস্বতীপূজার আয়োজন করে থাকেন। এবারের পূজায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে খোঁজা হচ্ছিল, কে পুরোহিত হবেন। আগে প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী এই পূজা পরিচালনা করতেন। তিনি এখন বিভাগে নেই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সরস্বতীপূজার দায়িত্বে থাকা স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সমাদৃতা ভৌমিক সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই করবেন পৌরোহিত্য। শিক্ষকেরাও দিয়েছিলেন অনুমতি। এর মাধ্যমে সরস্বতীপূজায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কোনো নারী পুরোহিত হিসেবে পূজা পরিচালনা করলেন।

আজ বুধবার পয়লা ফাল্গুনে শুক্লপক্ষের পঞ্চমী পূর্ণতিথিতে বিদ্যাদেবীর বন্দনায় পূজা উদ্‌যাপিত হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবারে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হলে মোট ৩৬টি মণ্ডপে এই পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজি বিভাগের এই আয়োজন অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

সমাদৃতা ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ ভাবে যে নারীরা পূজা করতে পারে না। এটা কোনো অদ্ভুত বিষয় নয়।’

সমাদৃতা আরও বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষক-সহপাঠীরা খুবই সহযোগিতা করেছে। আমার এই উদ্যোগ নেওয়ার বড় একটি কারণ, মানুষকে দেখানো যে শুধু ছেলেরাই পূজা করতে পারে না; নারীরাও পূজা করতে পারে। আর একটি কারণ, নারীশক্তি যেন এগিয়ে যায় এক ধাপ।’

সমাদৃতার পূজা পরিচালনায় খুশি বিভাগের শিক্ষকেরাও।

ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৌম্য সরকার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যেভাবে নারীদের দেখে, তা ভাঙুক। অন্যভাবে দেখুক তাদের। নারীরা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় কাজ করছে। পূজা কেন দিতে পারবে না?’

সকালে ঢাকঢোল, কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যা কমললোচনে/ বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাংদেহী নমোহস্তুতে’—সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র উচ্চারণ করে দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীকে প্রণতি জানান শিক্ষার্থীরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সরস্বতীপূজার মন্ডপে সমাদৃতা ভৌমিক
ছবি: প্রথম আলো

ইংরেজি বিভাগের সরস্বতীপূজায় শাস্ত্রীয় সব নিয়ম মেনে পূজা করতে বসেন সমাদৃতা ভৌমিক। তিনি বলছিলেন, ‘শাস্ত্রমতে কোথাও নারীরা পূজা পরিচালনা করতে পারবে না, তা বলা নেই। ভারতে এটি প্রচলিত রয়েছে, আমাদের দেশে কম। আমি চাই এটি আরও প্রচলিত হোক।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজার আয়োজনে নারীর পৌরোহিত্য খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন নারীরা পূজা পরিচালনা করতে পারবেন না? কোথাও মানা নেই। শাস্ত্র মেনে নারী-পুরুষ যে কেউ পূজা করতে পারেন। এমনভাবে নারীদের এগিয়ে আসাকে আমি অভিনন্দন জানাই।’

আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে সেসব বিভাগের স্বকীয়তা। যেমন আইন বিভাগের মণ্ডপ দেশের বিচার বিভাগের সুপ্রিম কোর্টের ভবনের আদলে করা হয়েছে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অপূর্ব চৌধুরী বলেন, মণ্ডপে প্রতিমা স্থাপন, সাজসজ্জাসহ নানা রকমের আলপনা আঁকায় গত কয়েক দিন শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা ছিল। প্রতিটি বিভাগই অন্যদের থেকে নিজেদের মণ্ডপ সুন্দর করতে প্রচেষ্টা চালায়। ভিন্ন ফ্রেম, ব্যানার, মঞ্চসজ্জায় একেক মণ্ডপ একেক রূপে ফুটে উঠেছে।