ময়লার স্তূপে পাওয়া সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ, হাত হারিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে শিশুটি

রাজধানীর শনির আখড়ায় ময়লার স্তূপে কুড়িয়ে পাওয়া সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণে আহত হয়েছে এই শিশুছবি: প্রথম আলো

বাসার পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে আট বছরের শিশু নূর ইসলাম একটি অদ্ভুত ধরনের বস্তু এনে মা বিউটি আক্তারকে দেখিয়েছিল। শিশুটির মা বস্তুটি হাতে নিয়েও দেখেছিলেন। কিছু বুঝতে না পেরে মা এটি ফেলে দিতে বলেছিলেন; কিন্তু শিশু নূর ইসলাম এটি ফেলে না দিয়ে খুলে দেখতে চেয়েছিল। তখন সেটির বিস্ফোরণে ডান হাতের তালুসহ ৪টি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শিশুটি এখন রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) বিছানায় কাতরাচ্ছে।

গতকাল রোববার দুপুরের পর ঢাকার কদমতলীর শনির আখড়ার জাপানি বাজারের ৪ নম্বর গলি এলাকায় এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কদমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাফায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরিত হওয়া বস্তুটি সাউন্ড গ্রেনেড। এ ধরনের সাউন্ড গ্রেনেড পুলিশ ব্যবহার করে। ৫ আগস্ট বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র, গুলিসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম লুট হয়েছিল। এই সাউন্ড গ্রেনেড তখন লুট হয়ে থাকতে পারে। আবার আন্দোলনের সময় পুলিশ অনেক সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছিল। এই সাউন্ড গ্রেনেড হয়তো অবিস্ফোরিত অবস্থায় ছিল। শিশুটি এটি ময়লার স্তূপে খুঁজে পেয়েছিল।

শিশু নূর ইসলাম এখন পঙ্গু হাসপাতালের চতুর্থ তলার একটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর ডান হাত ব্যান্ডেজ করা। ব্যথায় কাতরাচ্ছে। রিকশাচালক বাবা মো. হৃদয় ও গৃহকর্মী মা বিউটি আক্তার একমাত্র সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। সন্তানের এমন পরিণতির জন্য শিশুটির মা বারবার নিজেকেই দোষারোপ করছিলেন। তিনি বলেন, গতকাল দুপুরে খাওয়ার পর বাসা থেকে খেলতে বের হয়েছিল নূর ইসলাম। তখন অদ্ভুত ধরনের একটি বস্তু নিয়ে এসে দেখায় সে। সেটি তিনি হাতে নিয়েও দেখেছিলেন। পরে আবার নূর ইসলামের হাতে দিয়ে ফেলে দিতে বলেন। একটু পরই বিস্ফোরণের শব্দ পান বিউটি আক্তার। বাইরে বেরিয়ে দেখেন, নূর ইসলামের হাতের একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মাথার চুলে আগুন ধরে গেছে।

সন্তানের এমন অবস্থা দেখে বিউটি আক্তার বলেন, দ্রুত নূর ইসলামকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল রাতেই নূর ইসলামের অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘নূর ইসলামের এমন অবস্থার জন্য আমিই দায়ী। যদি জানতাম বোমা, তবে এটা তারে আর দিতাম না।’

নূর ইসলামের বাবা মো. হৃদয় জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। তিন হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে থাকেন শনির আখড়া এলাকায়। অল্প আয়ের সংসার তাঁদের। এ কারণে নূর ইসলামকে স্কুলে ভর্তি করেননি। তবে তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করার চিন্তা করছিলেন। এর মধ্যেই দুর্ঘটনায় শিশুটির হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

শিশু নূর ইসলামের বাবা-মায়ের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। তাঁর বাবা মো. হৃদয় বলছিলেন, ‘ছেলেটার কত বড় ক্ষতি হইল, এইটা বুঝে না। তবে আমি বাবা হইয়্যা, মানতে পারছি না। ছেলেটা চিরতরে পঙ্গু হইয়্যা গেল।’