প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুস সালামের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ঢাকা, ২৬ আগস্ট
ছবি: প্রথম আলো

সাংবাদিক আবদুস সালাম পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো জীবনযাপনের জন্য নিজের কাজকে সীমিত করেননি। তিনি সর্বসাধারণের কল্যাণে কাজ করেছেন। এ জন্য ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করতেও দ্বিধা করেননি তিনি। সাহসিকতার সঙ্গে তিনি সত্য প্রকাশ করেছেন, সততা ও আপসহীনতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুস সালামের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ অভিমত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। আবদুস সালাম মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে সাংবাদিক আবদুস সালাম স্মৃতি সংসদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে থেকেও বাঙালি সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধিকারের বিষয়টিকে প্রধান করে তুলে ধরার ক্ষেত্রে রাজনীতিকদের পাশাপাশি সাংবাদিকেরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আবদুস সালাম, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরীর মতো সাংবাদিকেরা ছিলেন অগ্রগণ্য। তাঁরা নিজেদের লেখনী ও সাংবাদিকতার মাধ্যমে সাহসিকতার সঙ্গে জনতার আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

রাজনৈতিক আন্দোলনকে বেগবান করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সে সময় সাংবাদিকেরা যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন, আবদুস সালাম ছিলেন তাঁদের অন্যতম বলে উল্লেখ করেন আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, এখন রাজনীতির মান নিম্নগামী হয়েছে। গণমাধ্যমের শক্তিকে ইতিবাচক হিসেবে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি ও সমাজের উন্নতির ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দ্য অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বলেন, দলীয় রাজনীতির প্রভাবে সাংবাদিক সমাজ আজ বিভক্ত। সে কারণে আবদুস সালামেরা তাঁদের সময় যে ভূমিকা রেখেছিলেন, এখন তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাচ্ছে না। এতে যেমন সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকতার মান নিম্নগামী হয়েছে, তেমনি সাংবাদিকেরা তাঁদের পেশাগত ক্ষেত্রেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই দ্বিধাবিভক্তির কারণে সাংবাদিকেরা যথার্থ ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারছেন না।

দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের বহু সক্রিয় সংগঠন রয়েছে। আবদুস সালামদের মতো কিংবদন্তিসম সাংবাদিকদের জন্মদিন বা মৃত্যুদিনে তাদের কোনো কর্মসূচি থাকে না। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁদের স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, আবদুস সালাম সত্য কথা বলতে ভীত ছিলেন না। কারাবরণ করেছেন, চাকরিচ্যুত হয়েছেন, কিন্তু সত্য প্রকাশে আপস করেননি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর এই আপসহীন ভূমিকা তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।

আলোচনা সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আজ দেশের সাংবাদিকতা যে পর্যায়ে এসেছে, তার পেছনে আবদুস সালামদের মতো পথিকৃৎ সাংবাদিকদের বিপুল ভূমিকা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আবদুস সালামের ছোট মেয়ে ও স্মৃতি সংসদের সভাপতি রেহেনা সালাম ও নাতনি মরিয়ম সুলতানা। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন প্রেস ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক আবদুল হাই সিদ্দিক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি কাজী রফিক, অধ্যাপক শহীদ মঞ্জু, আইনজীবী শহীদুল্লাহ মজুমদার প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক লোটন একরাম।