বেনাপোল ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুনের মামলার আসামি চিহ্নিতই হয়নি

দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় পুড়ে যায় বেনাপোল এক্সপ্রেসফাইল ছবি

রাজধানীর তেজগাঁও ও গোপীবাগে দুটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হওয়া মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। ঘটনার ২৫ দিন পরও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনায় কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া গত ৯ দিনেও গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগকারীদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।

তেজগাঁওয়ে গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে মা-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই দিন আগে ৫ জানুয়ারি রাতে গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে চারজনের মৃত্যু হয়। ওই দুই ঘটনায় ঢাকা রেলওয়ে থানায় হওয়া পৃথক দুই মামলার তদন্ত করছে ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ (জিআরপি)। পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও র‍্যাব।

মামলাগুলোর তদন্ত তদারক কর্মকর্তা রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন আজ রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনায় এখনো কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে ট্রেনটিতে আগুন জ্বলতে দেখা গেলেও কারা আগুন লাগিয়েছে, সেই ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন লাগানোর ঘটনায় গত ২১ ডিসেম্বর র‍্যাব-১ সন্দেহভাজন হিসেবে ৯ জনকে আটকের কথা জানিয়েছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। র‍্যাব বলেছে, ট্রেনে আগুন দেওয়ার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

র‍্যাব-৩-এর পক্ষ থেকে আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত চারজনের নাম জানতে পারার কথা বলা হয়েছিল। ২১ ডিসেম্বর কমলাপুর রেলস্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, এই চারজনের দুজন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী। বাকি দুজন ভাসমান (নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই) ব্যক্তি। পরে অবশ্য তিনি জানিয়েছিলেন, যাঁদের নাম জেনেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়া ছবি মেলেনি।

এ ছাড়া ২১ ডিসেম্বর ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন লাগানোর সঙ্গে জড়িতদের নাম-পরিচয় পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার যুবদল নেতা মুকিতের কাছ থেকে ট্রেনে অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এখন সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, মোহনগঞ্জ ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগে সরাসরি জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। নতুন পাওয়া ফুটেজ দেখে অগ্নিসংযোগকারীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পুড়ে গেছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস
ফাইল ছবি

ডিবির হাতে আটক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবী ও মহানগর দক্ষিণ যুবদলের নেতা কাজী মনসুর আলমকে গোপীবাগে ট্রেনে আগুন দেওয়া মামলায় গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন মামলাটির তদন্ত তদারক কর্মকর্তা রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। আজ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনে আগুন দেওয়ার সন্দেহে ডিবি তাঁদের ওই মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। এর আগে রিমান্ডে থাকাকালে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন, ৪ জানুয়ারি নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে যুবদলের এক নেতা ট্রেনে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব নেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে যুবদলের ওই নেতাকে গ্রেপ্তার করবেন তাঁরা। তাঁকে গ্রেপ্তার করা গেলে অনেকটা স্পষ্ট ধারণা ধারণা পাওয়া যাবে।