রোগীর চাপ মুগদায়, নানা সংকট
হাসপাতালটিতে ঢাকার বাইরে থেকেও রোগী আসছেন। নার্স–সংকট। স্যালাইনের সরবরাহ নেই।
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় রোগী বাড়ছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার রোগীরা যেমন আসছেন, তেমনি রোগী আসছেন দূরের জেলা থেকেও।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল সোমবার মোট ৭০০ জন রোগী ভর্তি ছিল। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী ছিল ২৬৫ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিল ৭০টি শিশু। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও পুরুষের আলাদা তথ্য রাখা হচ্ছে না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, জুনের শুরু থেকে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। ১ জুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৯৪। ১২ জুন সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৬ জনে। ২৪ জুনে সব চেয়ে বেশি ৩১৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। ডেঙ্গুতে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চলতি মৌসুমে (এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত) মারা গেছেন ১০ জন।
হাসপাতালে একেক পালায় তিন থেকে চারজন নার্সকে প্রায় ২০০ রোগীর দেখভাল করতে হচ্ছে।মো. নিয়াতুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, মুগদা হাসপাতাল
হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘুরে গতকাল রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগই এসেছেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ধলপুর, শান্তিবাগ, কাজলা, মেরাদিয়া, মুগদা, বনশ্রীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে। তবে পটুয়াখালী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেও রোগীরা হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মুগদা হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নিয়াতুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু রোগীর ব্যবস্থাপনায় এ হাসপাতাল পর্যাপ্ত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে রোগীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সেখানে চিকিৎসা নিতে তেমন ভরসা পান না বলে হয়তো এ হাসপাতালে আসছেন।
ডেঙ্গু বাড়ায় মুগদা হাসপাতালের ১০ম তলায় পুরুষ রোগীদের এবং ৮ম তলায় ওপেন স্পেস বা খোলা জায়গায় শিশুদের রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নারীদের তৃতীয় তলার একটি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে ডায়রিয়া ও অন্যান্য অসুখের শিশু রোগীদেরও রাখা হচ্ছে।
হাসপাতালটির পরিচালক মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় এভাবেই রোগীদের রাখতে হচ্ছে। বিছানা নেই বলে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। মেঝেতে বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ থাকে সব সময়।
হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া পুরুষ রোগীদের একজন রুবেল হোসেন যাত্রাবাড়ীতে একটি মুরগির দোকানের কর্মী। তিনি মশা বেড়েছে উল্লেখ করে বললেন, ‘বাড়িওয়ালার ছেলে আর এক ভাড়াটে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন সম্প্রতি। এলাকায় মশা মারার মেডিসিন (ওষুধ) দেয় না। যদিও দেয় খালি ধুমা (ধোঁয়া) দেয়।’
রোগী ও রোগীর স্বজনেরা জানান, হাসপাতালটিতে স্যালাইনও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। স্যালাইন শেষ হয়ে গেলে বা স্যালাইনের নল দিয়ে রক্ত চলে এলে নার্সের দেখা মেলে না। মেঝেতে বিছানা করে রেখেছে।
কিন্তু বিছানার চাদরও পাল্টে দেয় না। হাসপাতালের খাবার মোটামুটি ভালো। তবে অনেক সময় দিতে দেরি হয়। অবশ্য গতকাল বেলা দুইটার দিকে শিশু ডেঙ্গু রোগীদের খাবার দিতে দেখা যায়।
রোগীদের বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসপাতালটির পরিচালক মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেশি। তাঁদের স্যালাইন দেওয়া, তা ঠিক সময়ে খুলে ফেলাসহ সার্বিকভাবে নজরদারির মধ্যে রাখতে হয়।
অথচ হাসপাতালে একেক পালায় তিন থেকে চারজন নার্সকে প্রায় ২০০ রোগীর দেখভাল করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে স্যালাইনের (ডিএনএস) সরবরাহ নেই। স্যালাইনসহ রোগীদের কিছু ওষুধ কিনতে হচ্ছে। তবে বলা যায়, ৭০ শতাংশ ওষুধই হাসপাতাল থেকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।