সৌদি আরবে পাঠানোর নামে প্রতারণা, ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন

মেট্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কার্যালয়ের সামনে অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী মানববন্ধনে অংশ নেন
ছবি: প্রথম আলো

সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে বহু গ্রাহকের কাছে টাকা নিয়েছিল মেট্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের জনশক্তি রপ্তানিকারী একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু টাকা নিয়েও বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেনি। ইতিমধ্যে যাঁদের সৌদি পাঠিয়েছে, তাঁদেরও কাজের বৈধ অনুমতিপত্র দেয়নি। এমন প্রতারণার অভিযোগ এনে ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভুক্তভোগীরা মানববন্ধন করেছেন। আজ শনিবার মেট্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কার্যালয়ের সামনে অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী এ মানববন্ধনে অংশ নেন।

মেট্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের ওই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নম্বর আরএল-৩৭৪। রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সড়কে অবস্থিত ৫১ নম্বর প্লটের খান টাওয়ারের চতুর্থ তলায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কাজের বৈধ অনুমতিপত্র না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে যাঁরা সৌদিতে গেছেন, তাঁদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। পুলিশের কাছে আটক হয়ে অনেকে জেলে খেটে দেশে ফিরেছেন। আর যাঁরা টাকা জমা দিয়েও ভিসা পাননি, তাঁরা টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাঁদের আটকে রেখে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে সই নেওয়ার মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

ভুক্তভোগীরা জানান, নজরুল ইসলাম ও মফিজুল ইসলাম সহোদর ভাই। মেট্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের ওই প্রতিষ্ঠান খুলে তাঁরা অনেকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়েও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা।

বেলায়েত হোসেন নামের একজন বলেন, তাঁর এক নারী স্বজনসহ মোট পাঁচজনকে সৌদি আরবে কাজের ভিসা দেওয়ার কথা বলে নজরুল ইসলাম (প্রতিষ্ঠানের মালিক) তাঁর কাছ থেকে গত জানুয়ারিতে নগদ ১৬ লাখ টাকা নেন। টাকা দেওয়ার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ভিসা দিতে পারেননি। গত জুনে টাকা ফেরত চাইতে তিনি প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে যান। এ সময় কর্মীদের নিয়ে নজরুল ইসলাম তাঁকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেন। আটকে রেখে সাদা কাগজে তাঁর সই নেওয়া হয়।

মো. মনিরুজ্জামান নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘২০১৯ সালে নজরুল ও তাঁর ভাই মফিজুল ইসলাম ২৩ লাখ টাকা নিয়ে আমার পরিচিত নয়জনকে সৌদি আরবে পাঠান। তবে তাঁদের কাজের বৈধ অনুমতিপত্র দেওয়া হয়নি। সৌদি আরব সরকার পরে ওই নয়জনের ভিসা বাতিল করে। এর মধ্যে একজনকে আটক করে দেশটির পুলিশ। ওই ব্যক্তি পরে জেল খেটে দেশে ফিরে আসেন। প্রতিষ্ঠানটি তাঁদের বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু তাঁদের দিয়ে নির্মাণকাজ ও মুরগির খামারে কাজ করানো হয়।’

রাসেল নামের এক ভুক্তভোগীর বাবা আবুল হোসেন বলেন, তাঁরা সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে তাঁর ছেলেকে এক মাস আগে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। কয়েক দিন আগে ছেলে (রাসেল) ফোন করে জানান, সৌদি আরবের দাম্মামে একটি বাসায় তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। কাজের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। ছেলে না খেয়ে জীবন পার করছেন। তিনি ছেলেকে ফেরত চান।

বিল্লাল হোসেন নামের একজন বলেন, মেট্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক সৌদি আরবে লোক পাঠানোর কথা বলে তাঁর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এখন টাকাও দিচ্ছেন না, বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থাও করছেন না। উল্টো টাকা চাওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করছি, আদালতে মামলা দিয়েছি। এখন দুই ভাই নজরুল ইসলাম ও মফিজুল ইসলাম আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।’

মানববন্ধনে উপস্থিত ভুক্তভোগীরা মেট্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।