তুমুল উত্তেজনায় প্রতিযোগিতা শুরু, উচ্ছ্বসিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই

বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ মো. জিয়াউল আলম।
ছবি: খালেদ সরকার

সকাল সাড়ে আটটা। তখনো শুরু হয়নি প্রতিযোগিতা। রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড়। শিক্ষার্থীদের কেউ ঘড়িতে সময় দেখছে, কেউ বইয়ের পাতা ওলটাচ্ছে, কেউবা নিজেদের মতো করে গুছিয়ে নিচ্ছে প্রস্তুতি। সবার চোখেমুখে আনন্দের ছাপ। সঙ্গে তুমুল উত্তেজনা। উদ্দেশ্য—যুক্তিতর্কে মেধা যাচাই। নিয়ম মেনে বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু হলো সকাল ৯টায়। শিক্ষার্থীরা নামল যুক্তি জয়ের যুদ্ধে।

‘যোগ দাও যুক্তির মেলায়’ স্লোগান নিয়ে ঢাকার অন্যান্য জায়গার মতো রাজধানী উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে চলছে পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব। ভাদ্রের রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে নিজ নিজ দলের শিক্ষকদের নেতৃত্বে খুদে বিতার্কিকেরা হাজির হয়েছে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে। অঞ্চলভিত্তিক এ বিতর্ক উৎসবে বিজয়ের মুকুট পরে জাতীয় পর্বে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে যুক্তির লড়াইয়ে নেমেছে তারা।

আজ শনিবার সকাল ৯টায় মাইলস্টোন কলেজ মিলনায়তনে বিতর্কের অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিতর্ক উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কলেজটির অধ্যক্ষ মো. জিয়াউল আলম।

বক্তব্য দিচ্ছেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান
ছবি: খালেদ সরকার

উদ্বোধনী বক্তৃতায় জিয়াউল আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘মেধা উৎকর্ষের জন্য শুধু পাঠ্যপুস্তক যথেষ্ট নয়। বর্তমান বিশ্ব প্রতিযোগিতামূলক। তাই প্রতিযোগিতাটা হবে সারা বিশ্বে। আর যারা মেধাবী, শুধু তারাই বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে। তোমাদের সারা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চলতে হবে, তাহলেই তোমরা হবে আগামীর বাংলাদেশ।’

জিয়াউল আলম আরও বলেন, ‘আমরা প্রথম আলোকে শুভেচ্ছা জানাই। কারণ, বিতর্ক মানেই আমরা বুঝি একটা গুরুগম্ভীর ভাব, সবার মাঝে টান টান উত্তেজনা, মারমার কাটকাট অবস্থা। কিন্তু প্রথম আলো এটাকে বিতর্ক উৎসব নাম দিয়ে আনন্দের মাধ্যমে বিতর্ক করার একটা নতুন ধরনের প্রয়াস সামনে এনেছে। এ জন্য আমরা তাদের অশেষ অভিনন্দন জানাই।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান, মাইলস্টোন কলেজের ডিবেটিং ক্লাবের মডারেটর শাফায়েত হোসেন।

প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান বলেন, ‘আমরা বিতর্ক কেন করি? আমরা বিতর্ক করি, কারণ এটা আমাদের শাণিত করে। নিজেদের যাচাই করার সুযোগ দেয়। আমরা অনেক সময় বিভ্রান্ত থাকি। সেই বিভ্রান্তি দূর বা সত্য–মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য আমাদের বিতর্ক করতে হবে। আমাদের সৃজনশীল হতে হবে, প্রশ্ন করতে হবে। যুক্তি দিয়ে তর্ক করতে হবে।’

পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসবে এক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন
ছবি: খালেদ সরকার

ডিবেটিং ক্লাবের মডারেটর মো. শাফায়েত উদ্দিন বলেন, ‘আমগাছে অনেক মুকুল হয়। কিন্তু আম হয় কিছুসংখ্যক। তেমনি অনেক শিক্ষার্থীদের মাঝে যারা এখানে এসেছে (উপস্থিত শিক্ষার্থী), বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছ, তারাই অনেক মুকুলের মাঝে আম। তোমরাই হবে আগামীর ভবিষ্যৎ।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক নিয়ে নানা পরামর্শ ও প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি উত্তম রায়। পুরো আয়োজনটির সমন্বয় করছেন সাইদুজ্জামান রওশন। আর সঞ্চালনায় ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক বিতার্কিক খায়রুন নাহার।

পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। প্রচার সহযোগী হিসেবে আছে নাগরিক টেলিভিশন।

মাইলস্টোন কলেজে আয়োজিত বিতর্ক পর্বে ১৩টি স্কুল অংশ নিচ্ছে। প্রতিটি স্কুল থেকে চারজন বিতার্কিক এবং কুইজের জন্য ছয়জন অংশ নিচ্ছে। এখান থেকে বিজয়ী দল জাতীয় পর্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।

পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসবে উত্তরায় চলছে বিতর্ক প্রতিযোগিতা
ছবি: খালেদ সরকার

দ্বিতীয়বারের মতো পুষ্টি–প্রথম আলো এ বিতর্ক উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সারা দেশে ৩৫টি জেলা ও রাজধানীতে ৫টি অঞ্চলে বিতর্ক উৎসব হচ্ছে। এর মধ্যে আজ উত্তরায় হচ্ছে ৩ অঞ্চলের উৎসব। বিতর্ক হচ্ছে সনাতন পদ্ধতিতে।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উচ্ছ্বাস

ঢাকার দক্ষিণখান আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসেছে ফাইরুজ মালিহা। অনুষ্ঠান শুরুর আগে সহযোগী অন্য প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় কথা হলে উচ্ছ্বাস ঢেলে মালিহা প্রথম আলোকে বলে, ‘এ প্রতিযোগিতার কথা ভেবে গতকাল রাত থেকে আমার চোখে ঘুম নাই। শুধু মনে হচ্ছিল কখন আসব, প্রতিযোগিতা কেমন হবে ইত্যাদি। শুরুতে একটু নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু এখানে এসে সবাইকে দেখে খুব ভালো লাগছে।’

পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসবে শিক্ষার্থীরা
ছবি: খালেদ সরকার

১০ শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিযোগিতায় এসেছেন ভাষানটেক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মো. শাফায়াত হোসাইন। চারজন বিতার্কিক, ছয়জন অংশ নেবে কুইজ প্রতিযোগিতায়। জানতে চাইলে শাফায়াত হোসাইন বলেন, ‘স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনেকবার বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছি। কিন্তু আঞ্চলিক পর্যায়ে এবারই প্রথম। স্কুল থেকে পুরো প্রতিযোগিতার বিষয়টি আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি আমারও খুব ভালো লাগছে।’

শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে এসেছেন অভিভাবক। প্রতিযোগিতা নিয়ে তাঁরাও ছিলেন উচ্ছ্বসিত।