মেট্রোরেলে ঘোরাঘুরি, টিকিটের জন্য দীর্ঘ সারি

দুই দিনের ছুটি শেষে আবার চালু হয়েছে মেট্রোরেল। ঢাকা, ১৩ এপ্রিলছবি: প্রথম আলো

ঈদের ছুটিতে দুই দিন বন্ধ থাকার পর চাকা ঘুরল মেট্রোরেলের। আজ শনিবার সকাল থেকেই চলছে রাজধানীবাসীর প্রিয় তালিকায় যুক্ত হওয়া দ্রুতগতির এই বাহন। অফিস-আদালত এখনো খোলেনি। তাই সকালের দিকে ফাঁকা কোচ নিয়েই ছুটেছিল মেট্রোরেল। তবে দুপুরের পর পরিবার-পরিজন নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হয়েছেন নগরবাসী। আর এতেই মেট্রোরেলে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন বৃহস্পতিবার মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল। আর গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বন্ধ ছিল মেট্রোরেল। দুই দিন পর আজ শনিবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে দিনের প্রথম ট্রেন উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিলের উদ্দেশে ছাড়ে। আর মতিঝিল স্টেশন থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশনের উদ্দেশে ট্রেনটি ছেড়েছে সকাল সাড়ে ৭টায়।

মেট্রোরেলের টিকিট কাটতে লম্বা লাইন। ঢাকা, ১৩ এপ্রিল
ছবি: প্রথম আলো

বেলা তিনটার দিকে মিরপুর ১১ নম্বর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কাটতে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড়ের কারণে এমআরটি কার্ডধারী যাত্রীদেরও স্টেশনে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাই অনেকটা ধাক্কাধাক্কি করেই মেট্রোতে উঠতে হয়েছে।

উত্তরা উত্তর স্টেশনগামী মেট্রোতে ওঠার পর যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। যাওয়ার পথে কথা হয় পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্ত্রী-সন্তান ও মাকে নিয়ে সচিবালয় স্টেশন থেকে উঠেছেন। উদ্দেশ্য মেট্রোরেল ভ্রমণ। দিয়াবাড়িতে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আবার মেট্রোতে করে বাসায় ফিরবেন।

উত্তরা উত্তর স্টেশনে নেমে দেখা গেল, সেখানেও টিকিট কাটার লাইনে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী মেট্রোতে করে যাঁরা উত্তরা উত্তর স্টেশনে গিয়েছেন, তাদের নিচে নামতে বেগ পেতে হচ্ছে। তিনতলার প্ল্যাটফর্ম থেকে দোতলায় নেমে বের হওয়ার কার্ড পাঞ্চ করতেই চার মিনিট সময় লেগেছে এই প্রতিবেদকের।

স্টেশন থেকে নামার আগে মেট্রোরেলের চালক টোটন পালের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। যাত্রীদের চাপ কেমন, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের পর থেকে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি।

স্টেশনে কর্তব্যরত দুজন পুলিশ সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তাঁরাও এই প্রতিবেদককে একই কথা বললেন।

উত্তরা উত্তর স্টেশনের বের হওয়ার পথে কর্তব্যরত মেট্রোর কর্মী মহিউদ্দিন সজীব বললেন, মানুষের চাপ তিন গুণ বেশি। কথা বলার সময় তাঁর কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছিল। পুরো শরীর ছিল ঘামে ভেজা। মানুষের চাপ সামলাতে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে বলে জানালেন তিনি।

মেট্রোরেল স্টেশনের খানিক দূরেই দিয়াবাড়ি। হেঁটে কিংবা রিকশায় করে যাওয়া যায় সেখানে। মেট্রোরেলের যাত্রীদের অনেকেরই পছন্দের একটি স্থান দিয়াবাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কেউ নৌকায় করে লেকে ঘুরছেন। অনেকে স্বজনদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন, কেউবা ওই এলাকার অস্থায়ী বাজারে গিয়ে হরেক রকমের পণ্য কিনছেন।

সেখানে কিছুক্ষণ থেকে আবারও উত্তরা উত্তর স্টেশনে ফিরে এবার মতিঝিলের উদ্দেশে যাত্রা। উত্তরা উত্তর ও উত্তরা সেন্টার থেকে যাত্রী ওঠার পর দেখা যায়, মেট্রোরেলের কোচগুলোতে আর জায়গা নেই।

লম্বা লাইন পেরিয়ে মেট্রোরেলে ওঠার পর ভেতরেও একই অবস্থা। ঢাকা, ১৩ এপ্রিল
ছবি: প্রথম আলো

পরে পল্লবী স্টেশন, মিরপুর ১১ ও মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশন থেকে ধাক্কাধাক্কি করে কয়েকজন মেট্রোরেলে উঠেছেন। মতিঝিল পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেল, বেশির ভাগ যাত্রী সচিবালয় ও মতিঝিলে নেমেছেন।

মতিঝিল যাওয়ার পথে কাজীপাড়া থেকে মেট্রোরেলে উঠেছেন রাকিব হোসেন ও মুহিব্বুল্লাহ নামের দুই তরুণ। তাঁরা জানালেন, খালা ও খালাতো বোনকে নিয়ে মতিঝিল যাচ্ছেন। পরে মতিঝিল থেকে আবার কাজীপাড়া আসবেন।  

শনিবার দিনভর মেট্রোতে কত যাত্রী চলাচল করেছে, এই হিসাব জানতে যোগাযোগ করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেনের সঙ্গে। রাত সাড়ে আটটার দিকে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দিনের যাত্রা শেষ হলে কত যাত্রী চলাচল করেছে, সেই হিসাব বলা যাবে। তিনি বলেন, যাত্রী খুব কমও হয়নি, আবার বেশিও হয়নি।

ডিএমটিসিএলের সূত্রমতে, পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ১৫ দিনে মেট্রোরেলে গড়ে দৈনিক যাত্রী চলাচল করেছেন ২ লাখ ৪৬ হাজার। রোজার আগে এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজারের মতো। ১৬ রমজান থেকে মেট্রোরেলের চলাচল এক ঘণ্টা বাড়ানোর পর যাত্রী আবার বাড়ছে। সে সময় দৈনিক গড়ে ২ লাখ ৯০ হাজার করে যাত্রী মেট্রোতে করে যাতায়াত করেছেন। চালুর পর থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ কোটি যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করেছেন।