সেই সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি’, অভিযোগ তুলেছে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের বিরুদ্ধে

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবফাইল ছবি

মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির যে সংবাদ সম্মেলন ‘ঠেকাতে’ দুজনকে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ, সেই সংবাদ সম্মেলন করেছে মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের সংগঠনটি। সেখান থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের বিরুদ্ধে।

আজ বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘এনইআইআর বাস্তবায়ন: মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন হয়। তার আগে গত রাতে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক এবং একজন সাংবাদিককে বাসা থেকে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

আরও পড়ুন

তাঁদের মধ্যে ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেলকে আজ সকালে ছেড়ে দেওয়া হলেও কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াস দুপুর পর্যন্ত ডিবি হেফাজতেই ছিলেন।

এর পেছনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের হাত রয়েছে বলে এই ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করলেও তিনি বলছেন, এর সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতাই নেই। তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে।

মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সংবাদ সম্মেলনে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) কার্যকরের আগে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

আরও পড়ুন

অনিবন্ধিত মুঠোফোন হ্যান্ডসেটের ব্যবহার রোধ ও টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু করতে যাচ্ছে এনইআইআর ব্যবস্থা। এটি চালু হলে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে নিবন্ধনবিহীন, চুরি হওয়া বা আমদানি অননুমোদিত ফোনের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হবে বলে আশা করছে সরকার।

এতে আপত্তি জানিয়ে আসা মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বুধবার সংবাদ সম্মেলন ডাকার পর মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সাংবাদিক মিজানুর এবং ব্যবসায়ী আবু সাঈদ পিয়াসকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি কার্যালয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শামীম মোল্লা বলেন, ‘গত রাতে তিনটা তিন মিনিটে আমাদের এই বিজনেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াসকে গ্রেপ্তার করেছে। এই উদ্দেশ্যগুলো আমরা জানি–বুঝি, কী কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আমাদের সভাপতির (মোহাম্মদ আসলাম) বাড়িতে ডিবি হানা দিয়েছে।’

আরও পড়ুন

মিজানুরকে আজ সকালে পুলিশ ছেড়ে দিলেও আবু সাঈদকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করছে না বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। তবে সকালে ছাড়া পাওয়ার পর মিজানুর প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘পিয়াস এখনো ডিবি হেফাজতে আছেন। আমরা দুজন একসঙ্গেই ছিলাম।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আবু সাঈদ ডিবি কার্যালয়ে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে তাঁরা কথা বলছেন।

কী নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, তা পুলিশ না জানালেও মিজানুর প্রথম আলোকে বলেন, তার সঙ্গে পুলিশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সংবাদ সম্মেলন নিয়ে কথা বলেছে। ডিবির কর্মকর্তাদের কথায় তাঁর মনে হয়েছে, ওপরের মহলের নির্দেশনায় তাঁরা চান, এই সংবাদ সম্মেলন না হোক। এ জন্য তাঁকে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি নেতারা বলেন, এনইআইআর বাস্তবায়নে তারা বাধা হতে চান না। কিন্তু যেভাবে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা সরকার করছে, তার পুনর্গঠন চান তারা। তাদের হাতে থাকা হ্যান্ডসেটগুলো বিক্রির জন্য এক বছর সময় চান তারা। তারা চান প্রধান উপদেষ্টা তাদের আলোচনায় ডাকুক, তাদের উদ্বেগগুলো শুনুক।

মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের এই সংগঠনটির দাবি, বিদ্যমান করনীতি অনুসারে এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফোনের দাম অনেক বেড়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলে এনইআইআর বাস্তবায়নে তড়িঘড়ি করছে।

শামীম মোল্লা বলেন, ‘একটা সিন্ডিকেট, আমরা উপদেষ্টার সহকারীর নাম শুনতে পাচ্ছি। ওরা মিলে আমাদের দেশের কয়েকজন মুনাফালোভী সুদখোর সিন্ডিকেটের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য কোটি কোটি মানুষকে এরা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’

এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকার পিছু না হটলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দেশের ২০ কোটি জনগণের মোবাইলের ভাগ্য কেন শুধু ১৮ জন লাইসেন্সধারীকে দেওয়া হবে?’

গত রাতে মিজানুরকে পুলিশ ধরে নেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা নিয়ে আলোচনায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের নামও আসে। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও।

তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এই ঘটনায় তাঁর কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার কথা নাকচ করেন।

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনের মাধ্যমে আসা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফয়েজ আহমদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো গণমাধ্যম আমার ওপর দায় চাপিয়েছে। তাদের উদ্দেশেই আমার বক্তব্য—এটা অনভিপ্রেত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজ করে। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকার অবকাশই নেই।’

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা এনইআইআর বাস্তবায়ন করছি। অবৈধ হ্যান্ডসেটের লাগাম টানতে সংক্ষুব্ধ পক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি বৈঠকও করেছে।’

ফয়েজ আহমদের বক্তব্যের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে শামীম মোল্লা বলেন, ‘আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি যদি এসব কাজে লিপ্ত হয়ে থাকেন, দয়া করে এসব কাজ থেকে আত্মসম্মানবোধ রেখে সরে আসুন। কোনো ধরনের সিন্ডিকেটের অজুহাতে ওদের মুনাফা বেশি করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনারা এসব পাঁয়তারা করবেন না।’

মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির এই সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন মার্কেটের মুঠোফোন ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।