রমনার প্রাণ–প্রকৃতি নিয়ে তাসলিমা আখতারের আলোকচিত্র প্রদর্শনী

রমনা পার্কে ‘ভালোবাসি রমনা: প্রাণ ও প্রকৃতির গল্প’ শিরোনামে তাসলিমা আখতারের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক দৌড়বিদ খবীর উদ্দীন খান। ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ছবি: এস এম জারিফ

রাজধানীর রমনা পার্কে ‘ভালোবাসি রমনা: প্রাণ ও প্রকৃতির গল্প’ শিরোনামে আলোকচিত্রী ও শ্রমিক-নারী আন্দোলনের সংগঠক তাসলিমা আখতারের আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল আটটায় পার্কের শকুন্তলা চত্বরের সামনে ৫৫টি ছবির এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ওয়াহাব, দৃক পিকচার লাইব্রেরির ব্যবস্থাপক ও কিউরেটর এ এস এম রেজাউর রহমান, আন্তর্জাতিক দৌড়বিদ খবীর উদ্দীন খান, পার্কের মহিলাঙ্গনের সংগঠক ও শরীরচর্চা পরিচালক কোহিনূর হক এবং পার্কে নিয়মিত আসা মানুষেরা।

তাসলিমা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে আমি পার্কে হাঁটছি। রমনা পার্কে বহু মানুষের মিলনমেলা হয়। শুধু মানুষ নয়, গাছপালা, পশুপাখি, কাঠবিড়ালি, শালিক, কদম ফুল সমস্ত কিছুর একটা সংমিশ্রণ আমরা এখানে পাই। একই সঙ্গে এখানে নারীদের অংশগ্রহণ আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।’

রমনা পার্কের গাছের ফাঁকে রাখা হয়েছে প্রদর্শনীর ছবিগুলো
ছবি: এস এম জারিফ

জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ওয়াহাব বলেন, ‘তাসলিমা যে মানুষগুলো বা যে জায়গার ছবি তোলেন, তা আসলে তাঁর জীবনের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ। রানা প্লাজায় বহু মানুষ নিহত ও আহত হওয়ার পর তাসলিমা ওনার বিখ্যাত ছবিটা তুলেছিলেন... “দ্য ফাইনাল এমব্রেস”। যেটা পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার পায়। সেখানে দুজন শ্রমিক দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছেন, নিথর দেহ। এই দৃশ্য আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়, তাসলিমা আলোকচিত্রী হিসেবে অনেক সংবেদনশীল এবং উনি আসলে জীবনের খুব কাছ থেকে ছবি তোলেন।’

বিগত বছরগুলোতে রমনা পার্কে নারীদের পদচারণা বেড়েছে
ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

তানজিম ওয়াহাব আরও বলেন, ‘তাসলিমার এই প্রদর্শনীর ছবিতে অনেকগুলো গাছের জীবনের গল্প আছে, একটা মহুয়াগাছের জীবনের গল্প আছে, যেটা ২০১৬ সালে ঝড়ে পড়ে যায়। আমি তাসলিমাকে ধন্যবাদ দিতে চাই, কারণ তাসলিমা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুধু আর্ট গ্যালারিতে থাকার জন্য নয়। যাদের জন্য ছবি তোলা, যে জায়গায় তোলা, সেখানে যখন ছবিগুলো ফেরত আসে, তখন মানুষের সঙ্গে ছবিগুলোর যে গভীর বন্ধন তৈরি হয়, তার একটা খুব শক্তিশালী উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত দেখতে পেলাম আমরা।’

তাসলিমা আখতারের ক্যামেরায় নিসর্গপ্রেমী দ্বিজেন শর্মা
ছবি: এস এম জারিফ

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আগত ব্যক্তিরা ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনীর ছবিগুলো দেখেন। এ সময় তাসলিমা আখতার ছবিগুলোর পেছনের গল্প তুলে ধরেন। পরে পার্কের খোলা পরিবেশে চায়ের আড্ডায় মেতে ওঠেন তাঁরা।

রমনা পার্কে পদচারণের অভিজ্ঞতা নিয়ে সাজানো তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ছবি দেখার সুযোগ থাকবে দর্শকদের।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ওয়াহাব
ছবি: এস এম জারিফ