ঢাকা নগর পরিবহনে যুক্ত হচ্ছে ১০০টি বৈদ্যুতিক বাস

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের মধ্যেই ঢাকা নগর পরিবহনের বহরে বিদ্যুৎ-চালিত ১০০টি নতুন বাস যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলার কাজটি এগিয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৭তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেয়র ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি শেখ ফজলে নূর তাপস এ তথ্য জানান।

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। এই কমিটি ঢাকা নগর পরিবহন নামে তিনটি রুটে বাস চালু করেছে। তবে এই বাস শুরুর পর যাত্রীদের প্রশংসা কুড়ালেও ধীরে ধীরে এসব বাসেও নানা অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘যদিও ছোটখাটো কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তারপরও ঢাকা নগর পরিবহন বীরদর্পে এগিয়ে চলছে।  সুনির্দিষ্টভাবে ছোটখাটো প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। আপনার জেনে খুশি হবেন যে এ বছরের মধ্যেই ঢাকা নগর পরিবহনে বিআরটিসির মাধ্যমে আমরা ১০০টি ইলেকট্রিক বাস সংযুক্ত করব। এর মাধ্যমে আমরা ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। বায়ুদূষণের যে তকমা আমরা শুনি, সেখান থেকেও আমরা এগিয়ে যেতে পারব, বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত হতে পারব।’

রাজধানীর ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে (২১ নম্বর রুট) পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা নগর পরিবহন চালু করা হয়েছিল। এই রুটে বিআরটিসির বাসের সঙ্গে ট্রান্স সিলভা পরিবহনের বাসও চলছে। এই যাত্রাপথে ট্রান্স সিলভা পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র শেখ তাপস বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২১ নম্বর যাত্রাপথে ট্রান্স সিলভা ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং, এই পুরো যাত্রাপথটি এখন বিআরটিসি দ্বারা পরিচালিত হবে। বিআরটিসি সেটা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ জন্য ট্রান্স সিলভার সব অনুমতি আমরা বাতিল করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢাকা নগর পরিবহনে তাদের যেসব বাস ছিল, যেগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আমরা জব্দ করব।’

সভায় অন্যান্যের ছিলেন মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন, বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক, গণপরিবহন-বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

ঢাকার গণপরিবহনের মালিকের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। আর ঢাকা ও এর আশপাশে দুই শতাধিক পথে (রুট) বাস চলাচল করে। যাত্রী তোলার জন্য এক বাসের চালক অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লায় লিপ্ত হন। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ে। এ ব্যবস্থা পরিবর্তনে ২০০৪ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ এ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, লক্কড়ঝক্কড় বাস তুলে নেওয়া এবং সহজ শর্তের ঋণে নতুন বাস নামানো। বাস চলবে পাঁচ-ছয়টি কোম্পানির অধীন। মালিকেরা বিনিয়োগের হার অনুসারে লভ্যাংশ পাবেন। বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি এই পদ্ধতিতে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বাস নামাচ্ছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ঢাকা নগর পরিবহন। বর্তমানে তিনটি রুটে ঢাকা নগর পরিবহনে বাস চলাচল করছে।