কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে প্রকাশনা খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ে: সৃজনশীল প্রকাশ ঐক্য
কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের পুরো প্রকাশনা খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কাগজের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন প্রকাশকেরা।
এ নিয়ে সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কাগজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ও সংকট নিয়ে’ এক সংবাদ সম্মেলন করে সৃজনশীল প্রকাশ ঐক্য।
সৃজনশীল প্রকাশ ঐক্যের নেতারা বলেন, কাগজের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হয়েছে আমদানিনির্ভর ‘প্লেট’ পাওয়ার সংকট। জরুরি পরিস্থিতিতে বাড়তি দাম দিয়েও মিলছে না এ উপকরণ। এ অবস্থায় প্রকাশনা খাত এখন অচলাবস্থায় পড়েছে। প্রকাশনা শিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হলে ক্ষতি শুধু প্রকাশকদেরই হবে না, এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ। তিনি বলেন, সাধারণত কাগজের মূল্য ধরেই বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। একটি বই পাঠকের হাতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত প্রায় ১৬টি পেশাদার হাত ঘুরে আসে। তাঁদের পেশাজীবন বইকে কেন্দ্র করেই। প্রতিটি হাতেই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ডলার সংকট ছাড়াও প্রতিনিয়ত নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে কাগজের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
২০২২ সালের বইমেলায় যে কাগজ ১৬ শ টাকা রিম ছিল, এখন সেটা ৩৫ শ টাকা। যেসব প্রতিষ্ঠান কাগজের বাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ও লভ্যাংশের স্বচ্ছতা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে মেলানোর দাবি এবং কাগজের দামের সঙ্গে মানের তারতম্য হচ্ছে কি না, তাও যাচাই করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিত্য ভোগ্যপণ্য নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে উল্লেখ করে মিলন কান্তি নাথ বলেন, কাগজের কৃত্রিম সংকট যারা তৈরি করে, গোপন মজুত করে, যারা নানা ফন্দি এঁটে কাগজের বাজারকে অস্থিতিশীল করে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
কাগজের দাম বাড়ায় অমর একুশে বইমেলায় এবার নতুন বই প্রকাশে প্রকাশকেরা অপরাগ হয়ে পড়েছেন উল্লেখ করে মিলন কান্তি নাথ বলেন, দু শ টাকার মূল্যের একটি বই, কাগজের দাম বাড়ায় চার শ টাকা করা যাচ্ছে না। এত উচ্চমূল্যের বই বিক্রি করব কাদের কাছে? কারণ বইয়ের সর্বাধিক ক্রেতা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে অনেক আগেই ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। আর যদি এক বছর নতুন বই প্রকাশ না পায়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব আগামী পাঁচ বছরেও সামাল দেওয়া যাবে না।
কাগজ উৎপাদন ও উৎপাদন সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল আমদানির সঙ্গে যুক্ত শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর প্রকাশনা শিল্পর কর্মযজ্ঞ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। এখন এই সংকটে মোকাবিলায় অভিভাবকের দায়িত্ব কে পালন করবেন, তা জানেন না বলেও উল্লেখ করেন প্রকাশকেরা। এ অবস্থায় দেশে বইয়ের উৎপাদন ও মানোন্নয়নে এবং বইমেলার প্রতি সরকারি নীতির অসংগতি দূর করতে একটা গ্রহণযোগ্য সমন্বিত নীতি প্রণয়ন বা স্বাধীন শক্তিশালী কমিশন গঠনের দাবিও করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সময় প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী ফরিদ আহমেদ, অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক, কাকলি প্রকাশনীর প্রকাশক এ কে নাছির আহমেদ, আবিষ্কার প্রকাশনীর দেলোয়ার হাসান, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশের অধিকারী কমল কান্তি দাস, সমগ্র প্রকাশনের প্রকাশক শওকত আলী, মুক্তচিন্তার কর্ণধার শিহাব বাহাদুর প্রমুখ।