রুবিনার ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নেওয়ার দাবি

নিহত রুবিনার স্মরণে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও ছাত্র ইউনিয়নের কিছু নেতা-কর্মী
ছবি: জাহিদুল করিম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস এলাকায় গত শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন শিক্ষকের গাড়ির চাপায় নিহত রুবিনা আক্তারের (৪৫) ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি রুবিনা ‘হত্যাকাণ্ডের’ সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তাঁরা।

রুবিনার স্মরণে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও ছাত্র ইউনিয়নের কিছু নেতা-কর্মী। সেখানেই এসব দাবি জানানো হয়।

সেখানে উপস্থিত রুবিনার বোনের মেয়ে উম্মে সালমা নিহা বলেন, ‘আমি আমার খালার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। এভাবে যেন আর কোনো সন্তানকে মা হারাতে না হয়।

খালার একমাত্র ছেলে আরাফাত আজ এতিম। তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ নেই। এ দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’

রুবিনার স্বামী মাহবুবুর রহমান দুই বছর আগে মারা যান। তাঁদের ছেলে আরাফাত রহমান তেজগাঁওয়ের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে রুবিনা তেজগাঁওয়ে স্বামীর বাসাতেই থাকতেন।

মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচির আগে চলছে প্রস্তুতি
ছবি: প্রথম আলো

শুক্রবার বিকেলে দেবর নুরুল আমিনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে রুবিনা রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাসা থেকে হাজারীবাগে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। ঢাবির চারুকলা অনুষদের বিপরীতে টিএসসি অভিমুখী সড়কে একটি প্রাইভেট কার পেছন থেকে তাঁদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে নুরুল আমিন মোটরসাইকেলসহ এক পাশে ছিটকে পড়েন। রুবিনা গাড়ির নিচে চাপা পড়েন। এ সময় গাড়ির বাম্পারে তাঁর পোশাক আটকে যায়। চালক গাড়ির নিচে আটকে যাওয়া রুবিনাকে নিয়ে বেপরোয়া গতিতে টিএসসি হয়ে নীলক্ষেতের দিকে যান। নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তোরণের কাছে গাড়িটি আটকে রুবিনাকে জীবিত উদ্ধার করেন পথচারীরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।

রুবিনাকে উদ্ধার করে নীলক্ষেত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন পথচারী জারিয়া জান্নাত। মোমবাতি প্রজ্বালনে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বেপরোয়া গাড়িটা থামানো থেকে শুরু করে সেখান থেকে আন্টিকে (নিহত রুবিনা) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং মৃত্যু পর্যন্ত আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। আমি দেখেছি, তিনি কত কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন। যদি গাড়িটা ওখানেই থেমে যেত, তাঁকে টানতে টানতে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া না হতো, তাহলে কখনোই তাঁর পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হতো না।’

জারিয়া জান্নাত আরও বলেন, ‘বেপরোয়া ওই গাড়ি চালাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন শিক্ষক। তিনি কীভাবে এমন একটা কাজ করতে পারলেন, এটা আমার প্রশ্ন। এটা একটা হত্যাকাণ্ড। এমন নির্মম ও পৈশাচিক হত্যা যাতে আর না হয়, এ জন্য ওই শিক্ষকের বিচার করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে।’