দূষণের ঢাকায় খোলা হাওয়ায়

ঈদের ছুটিতে রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে বেড়াতে যাওয়া মানুষের ভিড় বাড়বে। এর মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ির এই এলাকা একটি। সপ্তাহের ছুটির দিনে সবসময়ই এখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়। এখানে খাবারের দোকান ও বিনোদনকেন্দ্রিক নানা দোকানপাট দেখা যায়। গতকাল বিকেলেছবি: খালেদ সরকার

ঈদের লম্বা ছুটিতে স্বজনের সঙ্গে আনন্দের মুহূর্ত কাটাতে রাজধানীর বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ পরিবার নিয়ে ছুটে যান গ্রামে। তখন এই নগরে মানুষের চাপ কমে। যান্ত্রিকতার চিরচেনা বিড়ম্বনা থেকে একটুখানি মুক্তি মেলে। যানজট, কোলাহল ও ধুলাবালুমুক্ত কয়টি দিন আরামে কাটান নগরবাসী। ছুটে যান প্রকৃতির কাছে।
রাজধানীর ভেতরেই এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে মানুষ ছুটির অবসরটুকু কাটাতে ভালোবাসেন। উত্তরার দিয়াবাড়ি, পূর্বাচল নতুন শহর (৩০০ ফুট সড়ক), বেরাইদ বালু নদ, বছিলা গার্ডেন সিটি বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় তেমনি কয়েকটি বেড়ানোর স্থান। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, জাদুঘর, চিড়িয়াখানা ও বিনোদনকেন্দ্রেও প্রচুর মানুষ ছুটিতে ঘুরতে যান।

মনোরম লেক, অবারিত প্রান্তর

রাজধানীর তীব্র যানজট থেকে মুক্তির সর্বশেষ সংস্করণ মেট্রোরেল। ছুটিতে উত্তরা দিয়াবাড়ি বেড়ানোর শুরুটা করা যেতে পারে মেট্রোরেল ভ্রমণের মাধ্যমে। মেট্রোতে করে মতিঝিল, শাহবাগ, ফার্মগেট, আগারগাঁও কিংবা মিরপুর থেকে যাওয়া যাবে দিয়াবাড়িতে।
মেট্রোতে বসেই চোখে পড়বে মনোরম লেক আর অবারিত সবুজ প্রান্তর। মেট্রো ভ্রমণ শেষে, ট্রেন থেকে নেমে প্রথমেই যেতে পারেন লেকপাড়ে। সেখানে অস্থায়ী বাঁশ-ত্রিপলের তৈরি ছাউনির নিচে রাখা চেয়ারে বসলে গায়ে লাগবে শান্ত, স্নিগ্ধ হাওয়া। দেখা যাবে বিমানের ওঠানামা। প্রাণখোলা বাতাসে বসে পানির তরঙ্গ দেখতে দেখতে নিতে পারেন হালকা কিছু খাবারের স্বাদ। হাতের কাছেই মিলবে আইসক্রিম, চা, কফি, চটপটি, ফুচকা, কাবাবসহ নানা পদের খাবার। এগুলোর জন্য গড়ে উঠেছে ছোট ছোট টংদোকান।

পাশাপাশি একের এক সড়ক। দুই পাশে মনোরম লেক। রাজধানীর বুকে এমন দৃষ্টিনন্দন রাস্তা চোখে পড়বে পূর্বাচলে ৩০০ ফুটে
ছবি: প্রথম আলো

পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়ক

ঘনবসতির এই শহরে স্বস্তিতে নিশ্বাস নেওয়ার আরেকটি জায়গা রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প বা ৩০০ ফুট সড়ক। কুড়িল উড়ালসড়ক থেকে নেমে যাওয়া যাবে পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কে। সড়কটি বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের সামনে দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উঠেছে। একাধিক লেনের বিশাল এই সড়কের দুই পাশে আছে দীর্ঘ দুটি লেক।
পূর্বাচলের ৩০০ ফুটের প্রশস্ত রাস্তা ও খালি জায়গায় স্বজনদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি জায়গাটি ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ও হালকা খাবারের দোকান। এসব দোকানে বিদেশি বাহারি পদের খাবারের পাশাপাশি পাওয়া যাবে নানা মুখরোচক খাবার।

বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় ধরে বানানো হাঁটার রাস্তা (ওয়াকওয়ে)। গতকাল মোহাম্মদপুরের বছিলা গার্ডেন সিটি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নদীর পাড়ে হাঁটার রাস্তা

নদীর পাড়ে ঘুরতে যেতে চাইলে চলে যেতে পারেন মোহাম্মদপুরের বছিলা গার্ডেন সিটি এলাকায়। বছিলা তিন রাস্তার মোড় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করেই সেখানে যাওয়া যায়। বিকেলে রোদের তাপ কিছুটা কমে গেলে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় ধরে বানানো হাঁটার রাস্তায় (ওয়াকওয়ে) বেড়ানো যেতে পারে। হাঁটতে হাঁটতে খোলা বাতাস, নদীপথে চলাচল করা পণ্যবাহী ট্রলার (বাল্কহেড) চোখে পড়বে। নদীর পাড়েই স্থানীয় লোকজনের পারাপারে কয়েকটি ঘাট রয়েছে। সেখান থেকে মাঝির সঙ্গে চুক্তি করে বেড়ানো যেতে পারে নদীতেও।

তবে নদীতে নৌকায় করে বেড়ানোর ইচ্ছা থাকলে যেতে পারেন বেরাইদ এলাকাতেও। ঢাকার নতুনবাজার এলাকা থেকে মাদানী অ্যাভিনিউ (১০০ ফুট সড়ক) হয়ে যাওয়া যাবে সেখানে। বেরাইদ গুদারা ঘাট কিংবা বেরাইদ রিভারভিউ এলাকায় গিয়ে নৌকায় বেড়াতে পারেন। আছে হাতিরঝিলে ওয়াটারবাসে করে বেড়ানোর সুযোগ। ওয়াটারবাসে না চড়ে ঝিলের পাড়ে স্বজনদের সঙ্গে হেঁটে বেড়াতেও পারেন। ক্লান্তি এলে বসতে পারেন ঝিলপাড়ে যেকোনো রেস্তোরাঁয়।
এ ছাড়া ঢাকায় ঘোরাঘুরির জন্য আছে বেশ কিছু পার্ক। মিরপুরের চিড়িয়াখানা, শ্যামলীর শিশু মেলা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান ও বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক। ঢাকার অধিকাংশ ঐতিহাসিক স্থানই পুরান ঢাকায়। আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, লালকুঠি, কার্জন হল, হোসেনি দালান ঘুরে আসার সঙ্গে ইতিহাসও জেনে নেওয়া যাবে।