বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি ছাত্রদলের

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনছবি: শুভ্রকান্তি দাশ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাত্রদল এই সংহতির কথা জানায়। ‘বুয়েট সংকট: সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন এবং গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির দাবি’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি তাঁরা শ্রদ্ধাশীল। বুয়েট ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি ছাত্রদল সংহতি জানায়। আবরার ফাহাদ হত্যার পর মুষ্টিমেয় দু-একজন বাদে বুয়েটের সব শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। নিরাপত্তার অভাবে তাঁরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলেন। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পর বুয়েটের শিক্ষার্থীরা স্বস্তি ও নিরাপত্তা লাভ করেন। আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েটে ছাত্রলীগের টর্চার সেল বন্ধ হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজের হলে ছাত্রলীগের টর্চার সেলে নির্যাতন অব্যাহত আছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আপাতদৃষ্টে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে যে অবস্থান, তার একক দায়ভার ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগের উপস্থিতিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা ও একাডেমিক পড়াশোনার ক্ষতির আশঙ্কাকে অত্যন্ত যৌক্তিক মনে করছে ছাত্রদল। এ বিষয়ে ছাত্রদল অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সাংবিধানিক অধিকারের কথা বলে ছাত্রলীগ বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার যে কথা বলেছে, তা একটি নিষ্ঠুর প্রতারণা। ছাত্ররাজনীতির নামে তারা ক্যাম্পাসে একক দখলদারি ও ছাত্র নির্যাতনের টর্চার সেল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। ভবিষ্যতে বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হলে তার দায়দায়িত্ব ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুমে ছাত্রদের মারধর করার অনেক ঘটনা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলে ছাত্রদলসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সমর্থক কোনো শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারেন না। ছাত্রদল সমর্থন করার কারণে এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ছাত্রকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে নির্যাতন করে বের করে দেওয়া হয়েছে। নির্যাতন করার পর গুরুতর আহত অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের কারণে গত ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুজন নিরীহ শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন।

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও নির্যাতনকে ছাত্ররাজনীতি বলা যায় না। ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হলে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা আবশ্যক। ক্যাম্পাস ও হলে সব রাজনৈতিক সংগঠনকে অবাধে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দিতে হবে। সব শিক্ষার্থীকে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। ছাত্রদল ক্যাম্পাসগুলোতে সব রাজনৈতিক দলের সহাবস্থানের ভিত্তিতে সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চায় বিশ্বাসী। তারা বুয়েটসহ দেশের সব ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও সহাবস্থান দাবি করছে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও প্রচার সম্পাদক শরিফ প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।