সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা: অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় ৭টি সরকারি সংস্থা দায়ী

জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ভবন বিপজ্জনকতায় আচ্ছন্ন নগরী: প্রেক্ষিতে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারাছবি: দীপু মালাকার

ভবনে অগ্নিকাণ্ড ও এসব ঘটনায় হতাহতের জন্য অনুমোদন প্রদানকারী সাতটি সংস্থাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং ভবনমালিককে ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের’ আসামি করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ভবন বিপজ্জনকতায় আচ্ছন্ন নগরী: প্রেক্ষিতে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা)।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি ও স্থপতি ইকবাল হাবিব। তাতে বলা হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশে নগরায়ণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-১১ অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত–সহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলার কথা বলেছে। কিন্তু এখনো আমরা একটি নিরাপদ এবং অভিঘাত–সহনশীল নগরী গড়ে তুলতে পারিনি। নগরে সংঘটিত অগ্নিদুর্যোগ আজ বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সারা দেশে গত ৯ বছরে ১ লাখ ৯০ হাজার ১৬৭টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১ হাজার ৫১ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৬০৬ জন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ হচ্ছে অননুমোদিত অবৈধ ভবন, অবৈধ ভূমি ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তদারকির অভাব।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একটি রেস্তোরাঁ স্থাপনে ১০টি সংস্থার প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনাপত্তিপত্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেস্তোরাঁ লাইসেন্স, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের লাইসেন্স নিবন্ধন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দোকান লাইসেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ই-ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ফায়ার লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এসব ছাড়পত্র যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তদারকি ছাড়াই প্রদান করা অথবা ছাড়পত্রহীনভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নিরুদ্বেগ থাকার কারণেই বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আইনের ব্যত্যয় এবং তদারকির অভাবে ক্রমাগত ঘটে যাওয়া এই অগ্নিকাণ্ডগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো অর্থাৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা (ওয়াসা, তিতাস, ডিপিডিসি/ডেসা), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সর্বোপরি ভবনমালিক দায়ী।

প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতিহীনতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ঢাকায় গত পাঁচ বছরে হওয়া অন্তত ৯টি বড় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা পারস্পরিক দোষারোপের মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব থেকে ‘দায়মুক্তি’ নেওয়ার চেষ্টা করছে। হাতে গোনা দু-একটি ক্ষেত্রে মামলা হলেও সাজার কোনো নজির নেই।