গরুর দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন সেলিম

মাহমুদা হক ও সানজা মারোয়া
ছবি: সংগৃহীত

মাহমুদা হক ওরফে বৃষ্টি প্রতিদিনই ঘুমানোর আগে গরুর দুধ পান করতেন। আর সেটাকেই সুযোগ হিসেবে বেছে নেন মাহমুদার স্বামী সেলিম। মঙ্গলবার রাতে সেলিম ঘুমের ৩০টি বড়ি এনে দুধের পাত্রে পুরো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দেন। এরপর যথারীতি মাহমুদা সেই দুধ পান করেন। এমনকি তাঁদের ১০ বছর বয়সী মেয়ে সানজা মারোয়াও দুধ পান করে। এরপর দুজনেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। বুধবার সকালে তাঁরা মারা যান।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় এ ঘটনা ঘটে। স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যায় গ্রেপ্তার এস এম সেলিম জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ। বুধবার হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সেলিমকে।

সেলিমের পৈতৃক বাড়ি মেরুল বাড্ডায়। সেখানেই মাহমুদা তাঁদের দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন। সেলিম বর্তমানে বেকার। সানজা মেরুল বাড্ডায় একটি মাদ্রাসায় পড়ত।

এ ঘটনায় মাহমুদার বাবা মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে সেলিমকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।

বাড্ডা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বনিবনা ছিল না। দুজনই পরস্পরকে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন সন্দেহ করে ঝগড়া করতেন। এর জেরে স্ত্রী মাহমুদাকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকেন সেলিম। মঙ্গলবার রাতে তিনি গরুর দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। মাহমুদা সেই দুধ পান করেন। স্ত্রীকে হত্যার ইচ্ছা থাকলেও মেয়েও এ দুধ খাবে, এমনটা তাঁর ধারণাতেই ছিল না। পরে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়া স্ত্রী ও মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।

বুধবার সকালে মাহমুদার মামা রাসেল সিকদার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ফোনে মাহমুদার অসুস্থতার কথা জানতে পারেন। পরে তাঁরা মেরুল বাড্ডায় মাহমুদার বাসায় গিয়ে মা–মেয়েকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। মাহমুদার আট মাস বয়সী শিশুটি খাটে শুয়ে ছিল। পরে তিনি ও সেলিম মিলে মা–মেয়েকে অচেতন অবস্থায় স্থানীয় বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। এরই মধ্যে খবর পেয়ে বাড্ডা থানার পুলিশ ওই হাসপাতালে যায়।

মাহমুদার ছোট বোন মারিয়া হক প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে সেলিম তাঁকে ফোন করে বলেন মাহমুদা ও সানজা নড়াচড়া করছে না। কারও শ্বাসপ্রশ্বাস নেই। তাঁদের শরীর শীতল হয়ে গেছে।

বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক সাদেক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মা ও মেয়েকে প্রথমে মেরুল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা দ্রুত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। মা ও মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল সোয়া ছয়টার দিকে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাদের জন্য মেরুল হাসপাতাল থেকে সেলিমকে আটক করা হয়।

আরও পড়ুন