‘তিন মাইয়া একটা ছেলে, আমি এখন কী কইরা খামু’

দোকানমালিক মো. হিরু ব্যাপারী
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর নিউ মার্কেটের পাশের নিউ সুপার মার্কেট ভবনে আজ শনিবার ভোরে লাগা আগুন নির্বাপণের কাজ এখনো চলছে। এ মার্কেটের দোতলায় মাইশা, তানহা ও নুরজাহান নামে তিনটি দোকানে মালামাল আগুন, ধোঁয়া ও ময়লা থেকে রক্ষা করে নিউমার্কেট এলাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনের রাস্তায় স্তূপ করছেন কর্মচারীরা। মালামালগুলোর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলেন দোকানমালিক মো. হিরু ব্যাপারী। এ ক্ষতি কী পোষাতে পারবেন—এমন প্রশ্ন করতেই হু হু করে কেঁদে ওঠেন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের এ বাসিন্দা।

হিরু ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার আর কোনো রাস্তা নাই। আমার তিনটা মাইয়া, একটা ছেলে। আমি এখন কী কইরা খামু ভাই। আমার তো সব শ্যাষ। আমার তো কিছু নাই, যা ছিল সব দোকানে।’

হিরু ব্যাপারীর তিন দোকানে ১০ জন কর্মচারী ছিলেন। তার মধ্যে নুপুর বেগম ও এনি বেগম দোকানের মালামাল রক্ষা করতে না পেরে বিলাপ করছিলেন।

মো. হামিদের পরিবারের সদস্য
ছবি: প্রথম আলো

নুপুর বেগমের স্বামী গত ডিসেম্বরে মারা গেছেন। তাঁর দুই মেয়ে। এ দোকানে সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন, তা দিয়েই কোনো রকমে চলত তাঁর সংসার। নুপুর বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব অসহায়। দিন এনে দিন খাই। স্বামী নাই, এই কয়টা টাকা দিয়া সন্তান লইয়া চলন লাগে। আমাদের মহাজন তো সব শেষ অইয়া গেছে, এখন আমরা কীভাবে চলব?’

‘গত রাতেও ২০ লাখ টাকার মাল তুলেছিলাম’

নিউ সুপার মার্কেটের দোকানের মালামাল পোড়ার পাশাপাশি পানি, ধোঁয়া ও ময়লায় নষ্ট হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এ মার্কেটের দোতলায় মো. হামিদ, মঈনুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম—এই তিন ভাইয়ের মেঘ দৃষ্টি গার্মেন্টস ও জাক্কাস ফ্যাশন নামে দুটি দোকান ছিল। সেখানে ৫০ লাখ টাকার মতো মালামাল ছিল। তার মধ্যে এক-দুই লাখ টাকার মালামাল নামাতে পেরেছেন তাঁরা। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনের রাস্তায় সেসব মালামাল এনে রেখেছেন তাঁরা। মালামালকে ঘিরে এই তিন ভাই, তাঁদের স্ত্রী, সন্তান ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কেউ কাঁদছিলেন, কেউ নির্বাক হয়ে ছিলেন।

আরও পড়ুন

মো. হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাতেও ২০ লাখ টাকার মালামাল তুলেছি। পাইকারেরা এসে দিয়ে গেছে। এই সময় কেউ বাকি দেয় না, নগদ টাকায় কিনেছি।’

তাঁরা পরিবার নিয়ে মিরপুরে থাকেন। আজ ভোর ৭টায় আগুন লাগার খবর পান হামিদ। সিএনজিচালিত অটোরিকশি নিয়ে দ্রুত আসেন দোকানে। হামিদ বলেন, ‘চাবি দেখাইলে আমাকে ঢুকতে দেয়। প্রথমবার দোকানে ঢোকার পর ধোঁয়ার কারণে বের হয়ে যাই। পরে আবার ঢুকি। দেখি, সব মাল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। আমাগো মাল পুড়ে নাই। পানিতে, ধোঁয়ায় আর ময়লায় মালগুলো শেষ। কিছু মালামাল শুকনা পাইছি। সেগুলো লইয়া আইছি।’

মো. হামিদ
ছবি: প্রথম আলো

কথা বলার এমন সময় হামিদের ফোনে কল আসে। কাঁদতে কাঁদতে ফোনে তাঁকে বলতে শোনা যায়, শেষ শেষ, সব শেষ। ৫০ লাখ টাকার মাল সব শেষ। তিন তলায় পুড়ছে, দোতলায় নষ্ট হইছে বেশি। পানিতে ভাসতাছে। কাউরে ঢুকতে দেয় না। লাখ লাখ টাকা শেষ অইয়া যাইতাছে, আমি তাকাইয়া তাকাইয়া দেখতাছি।

দোকান থেকে আনা মালামালের ওপর শুয়ে ছিলেন মো. শাওন। তাঁর মাথায় বোতল দিয়ে পানি দিচ্ছিলেন আরেক কর্মচারী মো. সিয়াম। তিনি বলেন, শাওন আগুনের ভেতর থেকে মালামাল আনছে। এহন অসুস্থ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

রোমার দেড় মাস আগে দেওয়া দোকানও শেষ

রাজধানীর আজিমপুর স্টাফ কোয়াটার এলাকার রোমা আক্তার রোকসানা মাত্র দেড় মাস আগে নিউ সুপার মার্কেটে ড্রিম লেডিস আন্ডার গার্মেন্ট শপ নামে দোকান দিয়েছিলেন। আগুন থেকে অল্প কিছু মালামাল রক্ষা করতে পেরেছেন তিনি। বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, তিনি কথা বলতে পারছেন না। পাশের আরেক নারী তাঁকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছিলেন। স্বজনেরা জানান, কিছু ক্যাশ টাকা ও কিছু ঋণ করে দোকান দিয়েছিল, এখন সব শেষ ওর।  

রোমা আক্তার বলেন, ‘আমার দোকানে ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকার মালামাল ছিল। তার মধ্যে কিছু বের করতে পারছি। এখন কী হবে, আল্লাহ জানেন।’