দৃষ্টিভঙ্গি বদলে কষ্ট-দুর্ভোগ মোকাবিলা করা যায়

বাংলা একাডেমিতে ‘ঢাকা ওয়েলবিং সামিট’ শীর্ষক আয়োজনে অতিথিরা। ঢাকা, ৮ মার্চছবি: প্রথম আলো

মানুষ তার জীবনের কখনো না কখনো কষ্ট-দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়। সেই সময় শুধু দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে সেই দুর্ভোগ মোকাবিলা করা সম্ভব। অন্যদের ভালো রাখতে চাইলেও আগে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে।

ভালো থাকার জন্য কী করতে হবে সে রকম কিছু উপায়ের কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন মনোচিকিৎসক ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীরা। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে শুক্রবার বাংলা একাডেমিতে দুই দিনব্যাপী আয়োজিত সম্মেলনে ‘নিজেকে ভালো রাখার’ আহ্বান জানানো হয়।

‘ঢাকা ওয়েলবিং সামিট’ শীর্ষক এই আয়োজন করেছে বেসরকারি সংস্থা ইনোভেশন ফর ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন (আইডব্লিউএফ)।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, ‘ভূমি, ভাষা ও জীবন’ এবং ‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ভালো থাকা’ স্লোগান সামনে রেখে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ‘নিজে ভালো থাকলে ভালো কাজ করা যায়’—এই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

বাংলা একাডেমির খোলা প্রাঙ্গণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা। তিনি বলেন, একজন মানুষকে শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেই হবে না। তাঁর সামাজিক ও মানসিক সুস্থতাও জরুরি। কর্মজীবী নারীরা কর্মস্থল ও বাসার কাজের টানাপোড়েনের মধ্যে নিজের একান্ত সময়টিকে বিসর্জন দেন।

গুরুতর অসুস্থতা থেকে নিজের ফিরে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ভালো থাকার জন্য তিনি জীবনকে সহজ সাধারণ করেছেন। সারা দিনের কাজের চাপ ও দুশ্চিন্তাকে সরিয়ে রাতে যথাসময়ে ঘুমের মাধ্যমে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করেন।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক অভ্র দাস ভৌমিক বলেন, নিজেকে ভালো রাখতে না পারলে অন্যকেও ভালো রাখা যাবে না। দুশ্চিন্তা মোকাবিলা করতে তিনটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে—আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেভাবে মানুষ দাঁত ও চুলের যত্ন নেন, সেভাবে মনেরও যত্ন নিতে হবে।

দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস বলে সম্মেলনে নারীর প্রসঙ্গ এসেছে জোরেশোরে। নারীদের নিয়ে নিজের বক্তব্যটি কবিতার ছন্দে উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি শামীম আজাদ। তাতে নারীর অমূল্য অবস্থানের কথা তুলে ধরেন তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে আইডব্লিউএফের নির্বাহী পরিচালক মনিরা রহমান বলেন, নারী-পুরুষের সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে শান্তি, মর্যাদা ও প্রত্যেকের স্বাধীনতা থাকবে, এমন একটি বিশ্ব গড়ে উঠবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের সহকারী অধ্যাপক তাবাসসুম আমিনা।
অনুষ্ঠানে গান, নাচ ও যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করা হয়। গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ‘দেহ, মন ও আত্মা’ শিরোনামে একটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে আলোচকেরা নিজেরা কীভাবে কষ্টের ও দুর্ভোগের সময় পাড়ি দেন, তা তুলে ধরে অন্যদের পরামর্শ দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহজাবিন হক বলেন, জীবনে যেকোনো কষ্টকে সহজভাবে নিতে হবে। কষ্টের সময়ে তিনি নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করেন, যেমন রান্না করা, ঘুরে বেড়ানো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, কষ্টের সময় থেকে বের হওয়ার জন্য নিজেকে সময় দিতে হয়। তিনি তা–ই করেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি দুশ্চিন্তা কাটাতে ঘুমান। আর কোনো কাজ থেকে যদি দুশ্চিন্তা হয়, তাহলে কাজটিতে আরও বেশি সময় ও শ্রম দেন।  

পাবনা মানসিক হাসপাতালের মনোচিকিৎসক আহসান আজিজ সরকার বলেন, সব মানুষেরই কষ্ট, দুর্ভোগ থাকে। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কি করলে জীবন অর্থবোধক হবে তা খুঁজে বের করতে হবে।  

এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) বাংলা ভাষা বিভাগের প্রধান রিফাত মুনমুন।