৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ৯ জন আহত হয়েছেন বলে আন্দোলকারীরা দাবি করেন। একই দাবিতে তাঁরা আগামীকাল বুধবার অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন।
আন্দোলনকারী প্রার্থী রাজিকুল ইসলাম রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আজকের কর্মসূচি শেষ করে দিয়েছি। আগামীকাল আবারও অবরোধ কর্মসূচি পালন করব। একই সঙ্গে ৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা বর্জন করার ঘোষণা দেব। পিএসসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি। তিনি আমাদের সঙ্গে স্বৈরাচারী আচরণ করছেন। পুলিশের লাঠিপেটায় ৯ জন আহত হয়েছে।’
৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন কিছু পরীক্ষার্থী। তাই তাঁরা পরীক্ষা পিছিয়ে ‘যৌক্তিক সময়ে’ নেওয়ার দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে আন্দোলন করছেন। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে বিক্ষোভ-অবস্থানের পর তাঁদের কর্মসূচি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের কয়েকটি স্থানে। ২২ ও ২৩ নভেম্বর রাজশাহীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে টানা কয়েক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ঢাকায় কর্মসূচি পালিত হয়।
প্রার্থীদের এমন অবস্থানের পর গত রোববার পিএসসির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘লিখিত পরীক্ষা শুরুর তারিখটি পূর্বঘোষিত। অনেক আগেই এই বিসিএসের রোডম্যাপ (রূপরেখা) প্রকাশ করা হয়েছিল। পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতিও শেষ। এখন তা পেছানো সম্ভব নয়।’
আজকের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীরা। বেলা একটার দিকে তাঁরা সেখান থেকে পদযাত্রা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে রওনা দিলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। সেখানে তাঁরা পুলিশকে ফুল দেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের যেতে বাধা দিলে তাঁরা বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শাহবাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথ পুলিশ বন্ধ করে দিলে ওই এলাকার আশপাশের সড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ চড়াও হয়। আন্দোলনকারীও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে পানি ছোড়ে। আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীরা পুলিশের একটি গাড়িও ভাঙচুর করেন। এরপর আন্দোলনকারীরা শাহবাগেই অবস্থান নেন।
পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। এ বিষয়ে চাকরিপ্রার্থী রাজিকুল বলেন, ‘পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানাতে আমরা যমুনার দিকে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের লাঠিপেটা করে। জলকামান থেকে পানি ছোড়ে। সাউন্ড গ্রেনেড মেরেছে। অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে আছে।’
ডাকসুর নিন্দা
এদিকে শাহবাগে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের ওপর পুলিশের বলপ্রয়োগের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করছে।
এক বিবৃতিতে ডাকসু বলে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহিংসতা এড়িয়ে চলতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে অযৌক্তিক বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। ধাওয়া, লাঠিপেটা বা অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে। এ ধরনের আচরণ ভবিষ্যতেও কোনো অবস্থাতেই পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
চলমান এ পরিস্থিতিতে আলোচনার মধ্য দিয়ে স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে সরকার ও আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানায় ডাকসু।